তেঁতুলতলা মাঠের মালিকানা কার?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি তারা পেয়েছেন। আপাতত থানার জন্য এটিই নির্দিষ্ট জায়গা। অন্যদিকে জমির সিটি জরিপের খতিয়ান এবং একটি মামলার রায় বলছে জায়গাটির মালিক মমতাজ বেগম-এর। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই জমির খাজনাও পরিশোধ করেন মমতাজ বেগম। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে মাঠের মালিকা আসলে কার।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) তেঁতুলতলা মাঠের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সচিবালয়ের দপ্তরে দেখা করেছেন মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, বেলা’র সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিবসহ চার জন। তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট, আমাদের জায়গার প্রয়োজন। কলাবাগানের একটা থানা ভবনও প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বলছি, যে জায়গা আমরা পেয়েছি এর চেয়ে যদি আরও ভালো কোনো সুইটেবল জায়গা মেয়র সাহেব বা অন্য কেউ ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে আমরা তখন সেটা কনসিডার করব। তবে আপাতত আমাদের থানার জন্য এটিই নির্দিষ্ট জায়গা। সরকারিভাবেও আমাদের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। এটিই আমার বক্তব্য’।
কিন্তু সিটি জরিপের খতিয়ানে দেখা গেছে এই জায়গার মালিক মমতাজ বেগম। জানা গেছে, ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই জমির খাজনা পরিশোধ করেন মমতাজ বেগম। এরপর তিনি কিছুদিন খাজনা দেননি। পরে জায়গাটি গণপূর্তের মধ্যে চলে যায়। এরপর মমতাজ বেগম ২০০৫ সালে ৩০ধারায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তিনি জয়ী হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মমতাজ বেগমের বোন আরজু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের জায়গার একটি অংশ নিয়ে আমার বোন মামলা চালিয়ে যান। সেই মামলায় আদালত তার পক্ষে রায় দেন। বোনের কাছে শুনতে পেরেছি জায়গাটি নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে মামলা চলছে, বর্তমান আমার বোন মুমূর্ষু অবস্থায়। ওই জায়গাটি কিভাবে পুলিশের দখলে গেল এটা আমাদের প্রশ্ন?
মমতাজ বেগমের আত্মীয় হাবিবুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের জায়গার একাংশ মমতাজ বেগমের নামে বরাদ্দ। তিনি এখন মুমূর্ষ অবস্থায় রয়েছেন। জমির বিষয়ে দৌড়াদৌড়ি করার মতন অবস্থা তার নাই এবং তার আত্মীয়স্বজন ও তেমন কেউ নেই।
হাবিবুর রহমানের দাবি, এই জায়গা নিয়ে কয়েকবার জটিলতা তৈরি হয়। জায়গাটি দুইবার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে ভুলবশত রেকর্ড হয়। এরপর মমতাজ বেগম মামলা করেন। ওই মামলায় জজ কোর্ট (আদালত) মমতাজ বেগমের পক্ষে রায় দেয়। মামলার রায়ের পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আদালত মমতাজ বেগমের নামে ছাড়পত্র দিতে বলেন। সেই ছাড়পত্র এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। যে কারণে এই জমির বিষয়টি ঝুলে থাকে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিলে এই জটিলতা তৈরি হয় না।
আসলেই এই জায়গাটি কার এর আগে এমন প্রশ্নের জবাবে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জায়গাটির মালিক ওসি বা থানা নয় ভূমি মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জায়গাটি হস্তান্তর করেছে। যতটুকু জানি এই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসক।
ওসি বলেন, এই জায়গা নিয়ে আমাদের কোনো ইন্টারেস্ট নাই। সরকারি জায়গায় থানা ভবন তৈরির জন্য আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা আমরা পালন করছি। আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা কাজ বন্ধ করে দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এই জমি আমরা নিয়েছি বিশেষ করে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের এই জমিটি দিয়েছে। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলে যায়।
গত ২৫ এপ্রিল তেঁতুলতলা মাঠ বাঁচাতে আন্দোলন করেন সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহ। আন্দোলন করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হলে এই জমিটি নিয়ে জটিলতা সামনে আসে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মাঠটি রক্ষায় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।
কেএম