‘আংকেল খেলার মাঠটি ছেড়ে দিন’
তেঁতুলতলা মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ এলাকাবাসীর কোনো কথায় শুনছে না তারা। আগের মতো পুলিশি পাহারায় এ নির্মাণকাজ চলছেই।
মাঠ রক্ষার দাবিতে রাজধানীর কলাবাগানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আান্দোলন করলেও তেমন কোনো ফল আসেনি। এদিকে মাঠের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় পুলিশকে লক্ষ্য করে দূর থেকে শিশুরা বলছে ‘আংকেল কাল না আমরা আন্দোলন করলাম? তাহলে আজ কেন মাঠে কাজ করছেন? আমাদের মাঠটা ছেড়ে দিন আমরা বন্ধুরা মিলে খেলা করব’।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর কলাবাগানের এলাকার তেঁতুলতলার মাঠে গিয়ে শিশুদের এমন আকুতি দেখা গেছে। তারা উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছে আপনারা আমাদের খেলতে দিন কাজ বন্ধ করুন।
এদিকে উপস্থিত পুলিশের সদস্যরা বলছে, কাজ বন্ধ করার কি ক্ষমতা আমাদের আছে? শিশুরা যেভাবে বলছে এতে আমাদের ও খারাাপ লাগছে। আমরা কী করতে পারি? আমাদের উপরের কর্মকর্তারা যদি কাজ বন্ধের আর্দেশ না দেন তাহলে তো আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীর কাজ নির্মাণের জন্য গতকাল ৫ জন শ্রমিক কাজে করলেও তা বাড়িয়ে সেখানে আজ ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩ জন রাজমিস্ত্রী তারা হলেন-রাজমিস্ত্রি সোহেল, মিয়া হোসেন ও আব্দুল। অন্যরা সবাই মিস্ত্রীদের সহকারী ও শ্রমিক। ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, টহল পুলিশ ও আনসারসহ মোট ১৬ জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত থেকে পাহারা দিচ্ছেন।
নির্মাণকাজ চলাকালে দূর থেকে শিশু আপন পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলছে, আংকেল কাজ করছেন কেন? আমরা তো কাল কাজ বন্ধের জন্য আন্দোলন করেছি? তাহলে কি আমাদের আন্দোলন হয়নি? আবার ও কি আন্দোলন করা লাগবে। এ সময় শিশু আপন রাজমিন্ত্রীদের উদ্দেশে বলে, ‘আংকেল আপনারা চলে যান তাহলে পুলিশ কাকুরা কাজ বন্ধ করে রাখবে আর আমরা এই সুযোগে মাঠে খেলা করব।’
মাঠের ভেতরে থাকা শিশু রাজু বলে, ‘পুলিশ ও রাজমিস্ত্রী কাকুরা আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। এখানে যদি আমাদের খেলাধুলা না করতে দেয় তাহলে আমরা কোথায় খেলব?’
তেঁতুলতলা মাঠে কথা হয় শিশু রায়হানের সঙ্গে। রায়হান বলে, আমরা তো মানুষ আমরা খেলব না? উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে রায়হান বলে, ‘কাকু, আপনারা একটু পুলিশদের বুঝিয়ে বলুন ওনারা আপনাদের ভয়ে মাঠ ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে।
আর এ সুযোগে আমরা মাঠে খেলা করতে পারব।’
নীরব হয়ে মাঠের সীমানা তৈরির কাজ দেখছে শিশু আবু সাইদ। এ সময় আবু সাইদ বলে, ‘আমরা কিছু বুঝিনা খেলা করতে চাই, খেলার জন্য মাঠ চাই।’
শিশু তাওহীদ নির্মাণ শ্রমিকদের উদ্দেশে বলে, ‘আংকেল, কাজ বন্ধ করে আপনারা চলে যান আমি আমাদের চকলেট কিনে দেব।’
এ দিকে ঘটনাস্থল থেকে একাধিক শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুদের মূল দাবি হলো খেলার মাঠ। তারা ৫ দিন ধরে তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। আগে এ মাঠে খেলা করত তারা। এজন্য শিশুরা বিভিন্নভাবে হতাশা প্রকাশ করছে।
তেঁতুলতলা মাঠের পাশের দোকানদার মোশারফ বলেন, টানা ৪ দিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে। মাঠে পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত থাকছেন।
এ এলাকায় বসবাসরত রোজিনা বেগম বলেন, সকাল বেলায় হাঁটতে বের হয়েছি পুলিশ বলছে শেষ দিনের মতো হেঁটে নেন। ঢাকায় এতো জায়গা অথচ মহল্লার মধ্যে এসে থানা করতে হচ্ছে, এটার রহস্য কী?
প্রসঙ্গত, তেঁতুলতলা মাঠটি হলো স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের একটি গলির মধ্যে। এটি একটি খালি জায়গা। গত ৪০ বছর ধরে এ জায়গাটি এভাবেই পড়ে আছে। যা পুলিশ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। ছোট এই মাঠে এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। এ মাঠে ঈদের নামাজ, স্থানীয় কেউ মারা গেলে তার জানাজা ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। এ এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করে আসছে। যার কারণে এখানে থানা হতে দিতে চায় না তারা।
কেএম/এমএমএ/