সাক্ষাৎকার: পর্ব-১
সবার আমলনামা নেত্রীর হাতে: নানক
আর মাত্র দেড় বছর পরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হবে। সেই নির্বাচনে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যাশা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে অতীতের দুই নির্বাচনের মতো একপেশে খেলা আগামী নির্বাচনে হবে না বলেই মনে করেন রাজনৈতিক নেতারা। তাই নির্বাচনী মাঠে শক্ত খেলোয়ার চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, দলের প্রার্থী হিসেবে কারা আসতে পারে, এসব নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ঢাকাপ্রকাশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের চিন্তাভাবনা ও নিজের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এ নেতা।
ঢাকাপ্রকাশ: দল থেকে বার বার নিষেধ করার পরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল। সেসকল বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে দলের অবস্থান কি?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত তো আছেই। তারা দলের সঙ্গে কোথাও সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না। আরও কিছু আলোচনার বিষয় রয়েছে। আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এখন পর্যন্ত আমাদের অবস্থান- বিদ্রোহীরা কোনো পদ-পদবীতে আসতে পারবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এই কাউন্সিল কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: আওয়ামী লীগ একটা দল, যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই দলটির যেকোনো কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবারের কাউন্সিলটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় নির্বাচন। তাই এবারের কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পূর্বে সারাদেশকে যেমন আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি, তেমনি কেন্দ্রীয়ভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপার তো রয়েছেই। আগামী দিনে এই কেন্দ্রীয় কমিটি (নতুন যে কমিটি হবে) নির্বাচনকে নেতৃত্ব দেবে।
ঢাকাপ্রকাশ: এবারের কাউন্সিলে কেমন পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: নেত্রী সব সময় কমিটিটা করে থাকেন পুরনো ও নতুনদের সমন্বয়ে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্য- এ দুটোর সংমিশ্রণে কমিটি হয়ে থাকে। এবারের কাউন্সিলেও সেদিকটাতেই নেত্রী খেয়াল রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। আগামী নির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জময় হবে। সেই চ্যালেঞ্জময় নির্বাচনে ভোট ভোট যুদ্ধ; শুধু সেটিই নয় যারা নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে চায়, যারা নির্বাচন বিমুখ, যারা গণতন্ত্রের পক্ষে না থেকে ষড়যন্ত্রের পথ অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো কমিটি হবে বলে মনে করেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এই দলটিকে এত সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে দলটির সব তিনি চেনেন, ভালোভাবে চেনেন, ভালো বোঝেন। সে কারণেই তিনি দলটি সেভাবেই সাজাচ্ছেন। সময় উপযোগী করে সাজিয়ে থাকেন এবারও সেভাবেই সাজাবেন।
ঢাকাপ্রকাশ: আগামী বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থী বাছায়ে কোন বিষয়টি গুরুত্ব পাবে? যে সকল সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে দলের অবস্থান কী?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: একেবারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে দিতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ নির্ভিক হতে হবে, এমনতর প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং যে বিষয়ে অভিযোগ সে সব কিছুর উপর একটি সার্ভে চলছে। সবার আমলনামা নেত্রীর কাছে আছে। বার বার মাঠ জরিপ করে আমলনামা নিচ্ছেন। সেই আমালনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না, কেউ না। সে যত বড় নেতাই হোক, আর যত বড় যেই হোক, কেউ রেহাই পাবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: এবারের নির্বাচনে মনোয়নের ক্ষেত্রে দলীয় পদ দেখবেন নাকি জনপ্রিয়তা দেখবেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: দেখুন নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন কিন্তু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে একটি বিষয় শিখিয়ে দিয়েছে। জনগণের প্রতিনিধির কোনো প্রার্থী মনোনয়ন পেলে তার ভোট মানুষের কাছে আছে। গত তিন টার্ম মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছে, যে শান্তি-শৃঙ্খলা দিয়েছে। সর্ব ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে কিন্তু নেত্রী জনপ্রিয়তার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। তার সেই জনপ্রিয়তাকে পক্ষে আনতে হলে সেই জনপ্রিয়তাকে ভোটের অংকে যদি পক্ষে আনতে হয় তাহলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীই দিতে হবে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিলে বিপুল ভোট দিয়ে জয়লাভ করায় মানুষ, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।
ঢাকাপ্রকাশ: টানা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এর ফলে অনেক জায়গায় এমপিদের কাছে অনেক ভালো নেতা অসহায়, সেক্ষেত্রে দল কী করবে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক: বিষয়গুলো উড়িয়ে দিতে চাই না। বিষয়গুলো রয়েছে বলেই নেত্রী সারা দেশে মাঠ জরিপ করছেন। নেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নের ব্যাপারে কোন নেতা, কত বড় নেতা এই বিষয়গুলো জানেন।
সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চোখ রাখুন ঢাকাপ্রকাশে।
এসএম/টিটি