হাতছাড়া হতে পারে মালয়েশিয়ায় ১২ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ
২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি সুরাহা হয়নি। এ কারণে তিন বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চুক্তি হলেও আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে হাত ছাড়া হতে পারে ১২ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী পাঠাতে চুক্তি হলেও পরে মালয়েশিয়া শর্ত দেয় ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ এই ‘সিন্ডিকেট’ ব্যবস্থায় রাজি নয়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সাড়ে ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে দেশটিতে আরও প্রায় ১২ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারকে তাই খুব সতর্ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বালাদেশ ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে মালয়েশিয়া থেকে ২৩৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশের জন্য নবম সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অজর্নকারী দেশ হলো মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান গত ১৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে ২৫টি বাংলাদেশি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির (বিআরএ) মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানান। দেশটি অবশ্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম প্রকাশ করেনি।
এ প্রেক্ষাপটে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ ১৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর চিঠির জবাব দেন। চিঠিতে ইমরান আহমদ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রাসঙ্গিক সনদ অনুযায়ী সর্বদা স্বচ্ছ, ন্যায্য ও নিরাপদ অভিবাসনের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী লিখেছেন, আমাদের প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ সমস্ত বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রেখেই গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
মালয়েশিয়া বলছে, কম সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হলে তাদের মনিটরিং করা সুবিধা হয়। এজেন্সিগুলো জবাবদিহির আওতায়ও থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, ২০১৫ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে নিয়োগের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
সেই ব্যবস্থায় মাত্র ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছিল। সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলোর অতিলোভের কারণে ব্যবস্থাটি ভেস্তে যায়।
সরকার দেশটিতে তখন কর্মী পাঠানোর খরচ মাত্র ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সিন্ডিকেট কর্মীপ্রতি ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়ায় অনেক শ্রমিক নির্যাতন ও পাচারের শিকারও হয়েছিল।
তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। তারপর অনেক দেনদরবার করে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরে আবার চুক্তি হয় দেশটির সঙ্গে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী মো. ইমরান আহমেদ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বলেন, বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত। তবে মালয়েশিয়ার মাত্র ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করব না।
কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য নয়, মালয়েশিয়ার জন্য আটকে রয়েছে দাবি করে ইমরান আহমদ বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় পাঠাতে চাই। আমরা কোনো দেশের কাছ থেকে কোনো অনৈতিক শর্ত মেনে নেব না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ২০১৬ সালে লুণ্ঠনকারী সিন্ডিকেটটি এবারও দুই দেশের নীতি নির্ধারকদের ভুল তথ্য দিয়েছে এবং শক্তি ও অর্থ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী রপ্তানির জন্য চুক্তিতে একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্তটি হলো বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের নির্বাচন করার ক্ষমতা মালয়েশিয়া সরকারের হাতে রাখা। এ শর্তের কারণে আবারও সিন্ডিকেট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সিন্ডিকেটকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
যদিও বায়রার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন স্বপন বলছেন, সবদেশে সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠায় না। উদহারণ দিয়ে তিনি বলছেন, সিঙ্গাপুরে সাতটি এজেন্সি কর্মী পাঠায়, জাপানে পাঠায় ৪৫টি এজেন্সি। আর সৌদি আরবে পাঠায় ৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সি।
কাজেই মালয়েশিয়ায় ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠালে কোনো সমস্যা দেখছেন না তিনি। রুহুল আমিন স্বপন বলছেন, যে এজেন্সির যে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো সেই দেশে সেসব এজেন্সিই কর্মী পাঠায়। সরকারকে খুব সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ মালয়েশিয়ায় প্রায় ১২ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।
আরইউ/টিটি