মেলাহীন পহেলা বৈশাখে স্বস্তি-অস্বস্তি
বাতাসা, মুড়ি, মুড়কি, হাওয়াই মিঠাই, মুরালী, কদমা, সন্দেস, নাড়ু, কাঁচা আমের শরবত ও তরমুজ বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান মানেই রঙিন এক মেলা। মেলায় থাকবে এমন নানা ধরনের খাবার এবং ঘুড়িসহ শিশুদের নানা খেলনা। তবে এবারের নববর্ষের অনুষ্ঠানে ছিল না কোনো খাবারের দোকান।
তবুও স্বস্তি প্রকাশ করছিলেন অনুষ্ঠানে আসা মানুষজন। কারণ করোনা অতিমারির কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণ বা চৈত্র সংক্রান্তি অনুষ্ঠান হয়নি। এবার রাজধানীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে-তাতেই মানুষ খুশি। নিরাপত্তার কারণে হয়তো দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়নি।
তবে অস্বস্তিও ছিল। বিশেষ করে যারা শিশুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন, তারা পড়েছেন বেশ অসুবিধায়।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম ও যাইফা তাবাসসুম দম্পতি রাজধানীর বনশ্রী থেকে তারা দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়েছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দিতে। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির সামনে আসার পর নিরাপত্তার কারণে রিকশা থামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে সবাইকে পায়ে হেঁটে রমনা পার্ক বা টিএসসির দিকে যেতে হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ-কে যাইফা তাবাসসুম বলেন, আমরা বড়রা তো রোজা। ছেলে-মেয়েদের জন্য পানিও নিয়ে এসেছি। কিন্তু এতটা পথ হাঁটার পর ওদের তো ক্ষিদে পেয়ে গেছে। সবসময় তো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মেলায় নানা খাবার পাওয়া যায়, তাই খাবার কিছু আনিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সেহেরি খেয়ে শুয়েছিলাম। উঠতেও দেরি হয়ে গেছে। সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে যাবে, তাই বাসা থেকেও কিছু খাইয়ে আনিনি বাচ্চাদের। ভাবলাম এখানে তো খাওয়ানো যাবেই। এখন তো দেখছি দোকান কিছু নেই। খেলনা কিনে দিয়ে যে খুশি করার চেষ্টা করব, সেই সুযোগও নেই। এদিকে যে পথ হেঁটে এসেছি, আবার ওই পথ হেঁটে যেতে হবে, পরে রিকশা বা সিএনজি কিছু পেতে পারি। বুঝতেই তো পারছেন, রোজার কারণে খুব বেশি কোলেও নিতে পারছি না।
উল্লেখ্য, এবারের পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান সীমিত করার নির্দেশনা থাকায় সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়েছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান ও টিএসসিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে পূর্ব নির্ধারিত এসব অনুষ্ঠান ঠিক সময়ে সম্পন্ন হলেও তাদের অনেকে চারুকলা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করছিলেন। বৈশাখী খাবার চেখে দেখা, শিশুদের খেলনার দোকানে যাওয়া বা নারীদের নানা রঙের চুড়ি কেনার সুযোগ না থাকায় ছবি-সেল্ফি তোলায় ব্যাস্ত হয়ে ওঠেন তারা।
বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল থেকেই রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে হাজারো মানুষের ভিড় নামে। তবে অন্যান্যবার দুপুরে জনস্রোতে ভাটা পড়ার পর বিকাল থেকে আবার মানুষের ঢল নামলেও এবার তা হচ্ছে না। সন্ধ্যায় ইফতার, আর দুপুরের পর থেকেই ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে যেতে হয়। তা ছাড়া আজ সরকারি ছুটি থাকায় অনেকেই বাসায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ইফতার করার কারণে বিকালে আর বের হবে না। আবার কোনো কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পয়লা বৈশাখ উদযাপন-প্রতি বছরের মতো ইফতার অনুষ্ঠান করছে আজ বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে। সবমিলিয়ে পয়লা বৈশাখের দিন বিকালে আজ অন্যান্য বছরের মতো ঢাকার রাজপথে বাঙ্গালীয়ানা সাজের উপস্তিতি তুলনামূলক ভাবে কম।
এমএ/এমএমএ/