মুক্তিযোদ্ধা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭০
ছবি : সংগৃহীত
দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজার ৭৭০ জন। ৩৫টি ক্যাটাগরিতে এ সব মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত করা তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মুক্তিযোদ্ধার এই বিপুল সংখ্যাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৩৫টি ক্যাটাগরিতে চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত হয় তিন লাখ ৮৬ হাজার ৫৫ জনের। একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভূক্ত হওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধার নাম দুইবার থাকার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এই সব তালিকা সমন্বয় করে এক লাখ ৯৫ হাজার ৭৭০ জনকে চুড়ান্ত সংখ্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তবে এই সংখ্যাটিও আরো বাড়তে পারে। উপজেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ের আপিল প্রক্রিয়া শেষ হলে আরো কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম যুক্ত হবে তালিকায়।
৩৫টি ক্যাগাটরি হলো- ভারতীয় তালিকা, বেসামরিক গেজেট, শহিদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহিদ গেজেট, শহিদ বিজিবি গেজেট, শহিদ পুলিশ গেজেট, যুদ্ধাহত গেজেট, খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট, মুজিবনগর গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জেষ্ঠ্যতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গেজেট, বিসিএস গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমান বাহিনী গেজেট, নৌ বাহিনী গেজেট, নৌ কমান্ডো গেজেট, বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক গেজেট, বীরঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনী), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), বীরঙ্গনা সামরিক সনদ, যুদ্ধাহত পঙ্গু (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, যুদ্ধাহত (বর্ডারগার্ড) বাংলাদেশ) গেজেট, মুক্তিযোদ্দাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর), বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত/দায়িত্বপালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট, যুদ্ধাহত সেনা গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেট এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলাওয়ারী মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়েছে, এরমধ্যে সিলেট বিভাগের সিলেটে চার হাজার ২৯৬ জন, সুনামগঞ্জে চার হাজার ২২ জন, মৌলভীবাজারে এক হাজার ৪৯৫ জন ও হবিগঞ্জে দুই হাজার ৬৭ জন। রাজশাহী বিভাগে বগুড়ায় তিন হাজার ২০৪ জন, জয়পুরহাটে ৭৯৩ জন, নওগাঁ তিন হাজার ৬৯ জন, নাটোরে এক হাজার ৫৫৮ জন, চাপাইনবাবগঞ্জে দুই হাজার ১১৩ জন, পাবনায় দুই হাজার ৬৪২ জন, রাজশাহীতে দুই হাজার ৩২৭ জন ও সিরাজগঞ্জে তিন হাজার ১২৫ জন।
রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে তিন হাজার ৭৩৩ জন, গাইবান্ধায় দুই হাজার ৮০ জন, কুড়িগ্রামে চার হাজার ২৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক হাজার ৯১৪ জন, নীলফামারীতে ৯১৬ জন, পঞ্চগড়ে এক হাজার ৯৭০ জন, রংপুরে এক হাজার ৩২২ জন ও ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৫০৯ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ১২ হাজার ৯২৬ জন। এরমধ্যে জামালপুরে দুই হাজার ৭৮০ জন, নেত্রকোণায় তিন হাজার ৫৮ জন, ময়মনসিংহে পাঁচ হাজার ৭২৯ জন ও শেরপুরে ১৩৫৯ জন।
বরিশাল বিভাগে এপর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ১৫ হাজার ৬০২ জন। এরমধ্যে বরগুনায় এক হাজার ২৫৮ জন, বরিশালে ছয় হাজার ৮১১ জন, ভোলায় ১৪৯১ জন, ঝালকাঠিতে এক হাজার ৯৮৯ জন, পটুয়াখালীতে এক হাজার ২৫৬ জন ও পিরোজপুরে দুই হাজার ৭৯৭ জন।
খুলানা বিভাগে মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ২৩ হাজার ৩৫৫ জন। বাগেরেহাটে চার হাজার ৪৯৯ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক হাজার ৫২৬ জন, যশোরে দুই হাজার ৮২৯ জন, ঝিনাইদহে দুই হাজার ১০৪ জন, খুলনায় এক হাজার ৮৭৫ জন, কুষ্টিয়ায় তিন হাজার ৭৬ জন, মাগুরায় এক হাজার ৭১৫ জন, মেহেরপুরে এক হাজার ১২৮ জন, নড়াইলে দুই হাজার ৩৬৪ জন, সাতক্ষীরায় দুই হাজার ২৩৯ জন।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন ৩৭ হাজার ৭৮৫ জন। এরমধ্যে বান্দরবানে ৮২ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ছয় হাজার ৬৭৪ জন, চাঁদপুরে তিন হাজার ৮৭৮ জন, চট্টগ্রামে সাত হাজার ৯৬৮ জন, কুমিল্লায় আট হাজার ২৮১ জন, কক্সবাজারে ৩৮৪ জন, ফেনীতে দুই হাজার ৯৪৭ জন, খাগড়াছড়িতে ৫৪৯ জন, লক্ষীপুরে এক হাজার ৮৯৩ জন, নোয়াখালীতে চার হাজার ৯৮৭ জন এবং রাঙ্গামাটিতে ১৪২ জন।
ঢাকা বিভাগে মুক্তিযোদ্ধার মোট সংখ্যা হচ্ছে ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে ঢাকা জেলায় পাঁচ হাজার ৪৭ জন, ফরিদপুরে তিন হাজার ৯৭৮ জন, গাজীপুরে তিন হাজার ৬০ জন, গোপালগঞ্জে পাঁচ হাজার ৭৯৪ জন, কিশোরগঞ্জে তিন হাজার ৫৯৬ জন, মাদারীপুরে দুই হাজার ৯১৯ জন, মানিকগঞ্জে এক হাজার ৯২০ জন, মুন্সিগঞ্জে দুই হাজার ৪৪৮ জন, নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার ২৬১ জন, নরসিংদীতে চার হাজার ৮৩৬ জন, রাজবাড়ীতে এক হাজার ২৪৫ জন, শরীয়তপুরে দুই হাজার ২৫৯ জন এবং টাঙ্গাইলে আট হাজার ৪৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম চূড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৪ জেলায় ৩৫টি শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৯০৬ জন। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে নয় হাজার ৮৬৪ জনের নাম চূড়ান্ত করে একটি তালিক দেওয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন, খেতাবপ্রাপ্ত গেজেটে ৬৭৬ জন, শহিদ বেসামরিক তিন হাজার ৩৬৪ জন, যুদ্ধাহত গেজেট দুই হাজার ৪৮২ জন, সশস্ত্র বাহিনী শহিদ গেজেট এক হাজার ৬০৩ জন, পুলিশ শহিদ গেজেট ৪১১ জন, বিজিবি শহিদ ৮১৯ জন, যুদ্ধাহত বিজিবি ৩১৭ জন এবং যুদ্ধাহত সেনা ১৯২ জন।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত সংখ্যা দুই লাখের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার এই সংখ্যা অস্বাভাবিক। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিবার্তর লাল বই করেছিলাম। তখন পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। যাচাই-বছাই শেষে এক লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
আব্দুল আহাদ চৌধুরী বলেন, লাল বইকে ভিত্তি ধরে কাজ করলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে এতো সমস্যা হত না। এ ভাবে প্রকৃত তালিকাকে বার বার বিতর্কিত করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননা।
এনএইচবি/এসএন