যে কারণে বেড়েছে লোডশেডিং
গ্রীষ্মে এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তার উপর গ্যাস সংকটের কারণে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণেই গ্রামে বিদ্যুৎ থাকছে না তিন থেকে চার ঘণ্টা।
ঈদের পর এই সংকট আরও বাড়বে। ফলে লোডশেডিং করতে হবে আরও বেশি। এমনকি ঢাকাতেও তখন লোডশেডিং হবে। এমন কথা বলছেন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনই।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭টি। ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ৫৬টি। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ১১টি। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৩টি।
এর বাইরে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। প্রতিদিন ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে এ সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)।
অন্যদিকে, দৈনিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সে অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে না। গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। গত ৭ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮ মেগাওয়াট।
গ্যাসের সংকট এবং তেল ও কয়লার উচ্চ দামে উৎপাদন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সামনে গরম বাড়বে। কাজেই বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। তখন হয়ত গ্রামের মতো ঢাকাতেও লোডশেডিং বাড়তে পারে।
এর পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনেও সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া গ্রীষ্মে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এ সব কারণেও অনেক সময় বিদ্যুৎ বিতরণে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এটি বেশি করে প্রয়োজ্য।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী, মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২২ লাখ। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ১৬ লাখ। আপাতত বিপাকে আছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরাই। অধিকাংশ গ্রামেই দিনে ৩/৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, গ্যাসের স্বল্পতা থাকায় সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপাতত তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানাভাবে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের সমস্যাও সমাধান হয়েছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশন দিনে ৫ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশনা আগে থেকেই দেওয়া আছে। আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) থেকে শিল্প শ্রেণীর গ্রাহকদের প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ১৫ (পনের) দিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রতিদিন মোট ৪ (চার) ঘণ্টা সব শিল্প শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিম বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করবে।
আরইউ/আরএ/