মন্ত্রীর আশা মার্চের মধ্যে
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন থমকে আছে
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সারাদেশের তালিকা প্রণয়নের কাজ থমকে গেছে। এই ১৪ ডিসেম্বরের (২০২১) মধ্যে সারা দেশের তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কোনো কাজ করতে পারেনি।
তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী মার্চের মধ্যে সারাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ করতে পারবেন।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর গত ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন দ্রুত তাদের তালিকা করা হবে। কিন্তু প্রায় নয় মাস পার হয়ে গেলেও নতুন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কোনো তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। আমরা সারাদেশে নাম অর্ন্তভূক্তির আবেদন আহ্বান করেছিলাম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে বহু আবেদন জমা পড়েছে। আমরা সেই আবেদনগুলো স্ব-স্ব থানায় পাঠিয়েছি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটি আছে তারা তদন্ত করে, যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন পাঠানোর পর তালিকা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন থানা থেকে অনেক বুদ্ধিজীবীর সন্তান আবেদন করেছেন। থানা পর্যায়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি, আবেদনকারীদের পিতার মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা কী ছিল বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাদের ভূমিকা কী ছিল তা যাচাই করতে।
এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী মার্চের মধ্যে সারাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের এই তালিকা প্রকাশ করতে পারব।’
সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী যাচাই-বাছাই জাতীয় কমিটি প্রথমে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও শিল্পকলার বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি দখলদার কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরাই শহীদ বুদ্ধিজীবী।’
কমিটি তিন দফা বৈঠক করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১৮৬ জন বুদ্ধিজীবীর প্রথম তালিকা চূড়ান্ত করেছিল। গত ২৫ মার্চ (২০২১) সেই তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রকাশিত গেজেটে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের কে রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবে? কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে?- মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন একটি নীতিমালা করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
দ্বিতীয় দফায় সারাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজই হয়নি।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী মার্চের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
এনএইচবি/এএন