জেলা পরিষদ নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের ৪ নেতা
সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের ৪ নেতা। বৃহস্পতিবার দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমাদান শেষে এই ৪ নেতার নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নেতা-কর্মীদের ধারণা থাকলেও মনোনয়ন সংগ্রহ কিংবা জমা দেননি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি সিলেট-২ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বেশি আগ্রহী। তবে জেলা আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানকে সমর্থন দিয়ে তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম কিনেননি দলের অপর প্রভাবশালী নেতা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শেষ দিন পর্যন্ত যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ও জমা দিয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী ও বর্তমান প্রশাসক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রথম প্রশাসক মনোনীত হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। তিনি ২০১১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করলে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই সিলেট জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান। পরে শূন্য পদে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লুৎফর রহমান সিলেট জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেয়াদোত্তীর্ণের পর জেলা পরিষদে প্রশাসক বসানোর সুযোগ সৃষ্টি করে সরকার। সব ধাপ শেষ করে সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওইদিনই সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দিপ কুমার সিংহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সরকার মনোনীত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পরিষদের। তবে সরকার এরই মধ্যে স্ব স্ব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্বাচন পূববর্তী প্রশাসক নিয়োগ চূড়ান্ত করে। ফলে সিলেট জেলা পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে শুরু হয় তোড়জোর। প্রার্থীরা কৌশলে সরব হচ্ছেন মাঠে। দলীয় প্রধানের উপর নিজেদের আস্থার কথা জানালেও বিদ্রোহী হিসেবেও নির্বাচনী মাঠে দেখা যেতে পারে দু’একজন প্রার্থীকে।
সিলেট জেলা পরিষদের ওয়ার্ডসীমা পুননির্ধারণের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদের মোট ভোটার ১ হাজার ৫২৬ জন। সিলেটে ১৩ টি উপজেলায় মোট ভোটার ৩৯ জন। প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে ১৩ জন করে ১০৫ ইউনিয়ন পরিষদে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৫ জন। পৌরসভায় ১৩ জন করে ৫ পৌরসভায় ভোটার ৬৫ জন। সিলেট সিটি করপোরেশেনে ভোটার রয়েছেন ৫৭ জন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছি। তবে অবশ্যই সেটি হবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার উপর। দলীয় প্রধান যদি আমাকে যোগ্য মনে করে প্রার্থী বিবেচনায় রাখেন, তবেই নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করব।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী বলেন, দলের কাছে কোনোদিন কিছু চাইনি। এবারও চাইব না। রাজনীতি করছি দলের জন্য, দেশের জন্য। সেই দল যদি রাজনৈতিক কার্যক্রম বিবেচনায় আমাকে যোগ্য মনে করে, অবশ্যই জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ঘোষিত নিবাচনী তফসীল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আর ভোট গ্রহণ ১৭ অক্টোবর। ষষ্ঠতম কমিশন সভা শেষে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা দেন।
এসএন