একদিনের বৃষ্টিতেই 'জলকাবু' সিলেট!
একদিনের ভারি বৃষ্টিতেই 'জলকাবু' সিলেট। কেউ বলছেন প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে নগরের সৌন্দর্য্যবৃদ্ধির কুফল ভোগ করছেন নগরবাসী। আবার কেউ বলছেন,সিটি করপোরেশেনের সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, দায়হীনতা এবং দূরদর্শীতার অভাবেই নগরবাসী হয় জলকাবু। রবিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিপাত সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালেও অব্যাহত ছিল। এতে নগর জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। ফলে দুর্ভোগে পরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। পাঠানটুলা, চন্ডিপুল-পুলেরমুখের বঙ্গবীর রোড, চৌহাট্টা-নয়াসড়ক, রাজারগলি, পায়রা, বাদাম বাগিচা, খাসদবীরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানেও পানি প্রবেশ করেছে।
জলাবদ্ধ নগরের ভুক্তভোগীদের নিয়ে সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদি নিজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে 'আবার ফিরেছে জলাবদ্ধতা' শিরোনামে লিখেন, 'সবকিছু কেন জানি ফিরে ফিরে আসে! লোডশেডিং ফিরে এল! ঢাউস ঢাউস ভবন ভেঙে রাস্তা বড় করেও ফিরে আসে ফুটপাত দখল! ফিরেছে যানজট! ফিরল জলাবদ্ধতাও! এ যেন ফেরার ত্যাষ্ঠায় নাকাল!
সিলেটে ভারী বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা এই এক মৌসুমে বার কয়েক দেখা হলো। প্রথম দফায় ছিল ভয়াল বন্যার দোষ! দ্বিতীয় দফায় ক্লাইমেট চেঞ্জ! আজ, এক ভোরের বৃষ্টিতে জলে জেরবার দশা! কী বলা হবে এবার?
সিলেট নগর নদীমাতৃক। ২০১৩ সালে এ রকম জলাবদ্ধতা দেখে শুধু পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ সচল রাখতে বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ছড়া সচল করে সুফল মিলেছিল তখন। পরের বছর থেকে সেই সব কাজে যুক্ত করা হয় উদ্ভট সব উন্নয়ন। ভর করে সৌন্দর্যবর্ধন। এর মধ্যে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই বক্স কালভার্ট দিয়ে ছড়া-চাপা দেওয়া, ওয়াকওয়েতে দোকানকোঠা বরাদ্দ, নালা সুরক্ষা না করে ঝুনঝুনি চত্বর, চৌহাট্টা থেকে সড়ক বিভাজকে ত্রিশূলবিদ্ধ করে ত্রিশঙ্কু অবস্থা ধ্বংস করেছে প্রাকৃতিক প্রবাহকে!
এক দশকে নগরবাসী 'আজিজ' এখন! এই আজিজীয় অবস্থায় নগর ভবনে 'বাতি' একটাই। ভারপ্রাপ্ত হয়ে আছে এক সিন্ডিকেট প্রধান। নড়ে না, বা নড়ানো যায়ও না। জগদ্দল পাথর হয়ে বসা। আর্কিটেক-বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার পরোয়া করে না। ডিপ্লোমার ডিগবাজিতে বদলে দেয় সব পরিকল্পনা।
কী আর করা! সবকিছু যখন ফিরে ফিরে আসছে, তাহলে ফিরুক আবার ভোটের দিন! সময়টাও ফেরারি! ফিরে এলে ফেরারি সময়ে শোনাব, যে নগরে যতদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান, জলাবদ্ধতার হবে না অবসান!
জলাবদ্ধতা নিয়ে একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটুপানি হয়ে যায়। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নগরীর নিচু এলাকার মানুষ। বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসিন্দারা খাটের ওপর তুলে রাখেন। অনেক বাসার মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে।
সিলেট নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো.আজমল আলী বলেন, 'মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় আমার এলাকার মিরের ময়দান পায়রা ও রাজারগলি এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না'।
দক্ষিণ সুরমার রোমান আহমদ বলেন, 'পুরো বছর ড্রেনের কাজ চলে। কোনো কুল-কিনারা নেই। বৃষ্টি হলেই বঙ্গবীর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে যাওয়া আসা করতে গেলেও ভোগান্তির শেষ থাকে না'।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরীর অধিকাংশ ড্রেনের কাজ চলছে ধীরগতিতে। তাই বৃষ্টি হলেই পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক নালা, নর্দমা ও ছড়া ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি সহজে নামতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানও ফোন রিসিভ করেননি।
এএজেড