জেলা পরিষদ নির্বাচন
সিলেটে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা
তফসিল ঘোষণার পরপরই সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সরব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিবার। বিশেষ করে সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন, ক্ষমতাসীন দল কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে-এ নিয়ে এখন কৌতুহল সবখানে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও আলোচনায় উঠে এসেছে পাঁচ নেতার নাম। যাদের চারজনই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির নেতা। এ তালিকায় আছেন দলটির কেন্দ্রীয় এক সাবেক নেতাও। তাদের সবাই দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির ব্যাপারে আশাবাদী।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ঘোষিত নিবাচনী তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর। আর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
ষষ্ঠতম কমিশন সভা শেষে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা দেন।
তফসিল ঘোষণার পর জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে শুরু হয় তোড়জোর। ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণেচ্ছুক দলীয় প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা শুরু করেছেন প্রচার-প্রচারণা। ফলে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে জেলা পরিষদের ভোটারদের মধ্যে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে আওয়ামী পরিবারে প্রার্থী রয়েছেন একাধিক। প্রার্থীরা কৌশলে সরব হচ্ছেন মাঠে। দলীয় প্রধানের উপর নিজেদের আস্থার কথা জানালেও বিদ্রোহী হিসেবেও নির্বাচনী মাঠে দেখা যেতে পারে দু-একজন প্রার্থীকে। দলীয় প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে এ পর্যন্ত যাদের নাম পাওয়া গেছে- তাঁরা হলেন দলের জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহ সভাপতি বিজিত চৌধুরী।
আলোচনায় আছেন মহানগর সহ সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদের নামও। তবে তাঁর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তিনি জেলা পরিষদে নয়-সিলেট সিটি করপোরেশেনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বিগত দিনে জেলা পরিষদের প্রশাসক কিংবা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা সভাপতি/ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেই হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীই থাকতে পারেন দলীয় নেত্রীর পছন্দের শীর্ষে।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রথম প্রশাসক মনোনীত হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। তিনি ২০১১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করলে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই সিলেট জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। পরবর্তীতে শুন্য পদে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান সিলেট জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেয়াদোত্তীর্ণের পর জেলা পরিষদে প্রশাসক বসানোর সুযোগ সৃষ্টি করে সরকার। সব ধাপ শেষ করে সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওইদিনই সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। একইসঙ্গে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সরকার মনোনীত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পরিষদের। তবে সরকার এরই মধ্যে স্ব স্ব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রশাসক নিয়োগ চূড়ান্ত করে। ফলে সিলেট জেলা পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন।
সিলেট জেলা পরিষদের ওয়ার্ডসীমা পূর্ণ নির্ধারণের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদের মোট ভোটার ১৫২৬ জন। সিলেটে ১৩টি উপজেলায় মোট ভোটার ৩৯ জন। প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে ১৩ জন করে ১০৫ ইউনিয়ন পরিষদে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩৬৫ জন। পৌরসভায় ১৩ জন করে ৫ পৌরসভায় ভোটার ৬৫ জন। সিলেট সিটি করপোরেশেনে ভোটার রয়েছেন ৫৭ জন।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা বিষয়ে আমার কোনো ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যেহেতু দল করি, সেহেতু দলের সভানেত্রীর সিদ্বান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত।’
তিনি বলেন, নেত্রী যাকে যেখানে উপযোগী সেখানেই কাজে লাগাবেন।
দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘মাঠ রাজনীতির মানুষ আমি। সেই ছাত্রজীবনের উত্থাল সময় থেকে এখনও মাঠেই রয়েছি। মুজিবাদর্শের বুলি শুধু মুখে নয়, চিন্তা-চেতনা ও মননে ধারণ করেই দীর্ঘ অমাবস্যার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। সুতরাং দলীয় প্রধান কাকে কোথায় কাজে লাগাবেন, সেটি একমাত্র নেত্রীই ভালো খবর রাখেন।’
তিনি বলেন, শুধু দল থাকলেই হবে না নিজের বলও থাকতে হবে। নেত্রী চাইলে অবশ্যই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আপত্তি থাকবে না। কারণ দীর্ঘদিন থেকে মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে সেই বল আমার রয়েছে বলে মনে করি।
সিলেট জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, মানসিক প্রস্তুতি অবশ্যই রয়েছে। তবে অবশ্যই সেটি হবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার উপর। দলীয় প্রধান যদি আমাকে যোগ্য মনে করে প্রার্থী বিবেচনায় রাখেন, তবেই অংশ নেব নির্বাচনে।
প্রার্থীতা বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি তো জেলার রাজনীতিতেই যুক্ত ছিলাম। দলের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাকে মহানগরের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আমি মনে করি কাকে কোথায় কাজে লাগানো উচিত, সেই হিসেবে দলীয় প্রধানই ভালো খবর রাখেন। সুতরাং দল চাইলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব। ’
জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ইচ্ছে রয়েছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বিজিত চৌধুরীর। তিনি বলেন, দলের কাছে কোনদিন কিছু চাইনি। এবারও চাইব না। রাজনীতি করছি দলের জন্য, দেশের জন্য। সেই দল যদি রাজনৈতিক কার্যক্রম বিবেচনায় আমাকে যোগ্য মনে করেন অবশ্যই জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
এসআইএইচ