সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস: সেই ঝুমন দাস ফের গ্রেপ্তার
ফের গ্রেপ্তার হলেন সুনামগঞ্জের শাল্লার আলোচিত সেই ঝুমন দাস আপন। ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকাল থেকে দিবাগত রাত পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে শাল্লা থানা পুলিশ।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঝুমন দাস আপনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাল্লা থানার এসআই সুমন নুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে সকালে ঝুমন দাশকে বাড়ি থেকে ধরে আনে পুলিশ। টানা ১২ ঘণ্টা তাকে থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঝুমন দাসের ভাই নুপুর দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তাকে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুই দিন ধরে তাকে ফলো করছিল পুলিশ। এ সময় পুলিশ ঝুমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যায় এবং ফেসবুক থেকে কিছু পোস্ট রিমুভ করে দেয়।
নুপুর দাস বলেন, সন্ধ্যায় ঝুমনের স্ত্রী থানায় গেলে তাকে জানানো হয়-জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝুমনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মধ্যরাতে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তিনি আরও জানান, মন্দিরের ভেতরে মসজিদের দানবাক্স সংক্রান্ত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি নিজের আইডি থেকে শেয়ার করেছিলেন ঝুমন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে ঝুমনের স্ত্রী মুঠোফোনে বলেন, হঠাৎ করে আমার স্বামীকে ৪-৫ জন পুলিশ ধরে নিয়ে যান। জানতে চাইলে পুলিশ জানায়-জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ যাওয়ার ১ ঘণ্টা পরেই আমিও থানায় যাই এবং ধরে নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, ঝুমন দাসের ফেইসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেই সময় ঝুমন দাসকে হ্যান্ডকাপ ছাড়া একটা আলাদা রুমে রাখা হয়। কিন্তু পরে শুনি আমার স্বামীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। ওই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন মামুনুলের অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এর পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়িতে, মন্দিরে। এ সময় ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ৩ হাজার জনকে । এরপর থেকে পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে। শুধুমাত্র জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে পাঁচ দফা তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল। এরই মধ্যে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন ঝুমন দাস। কারাবন্দির ছয় মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
এসআইএইচ