সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড গড়া হলো না ক্ষীতিন্দ্রের
সিলেট থেকে ভৈরব পর্যন্ত ২৮১ কিলোমিটার সাঁতরে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য ৮২ কিলোমিটার অতিক্রমের পর সুনামগঞ্জের হরিনাপাটি এলাকায় পৌঁছে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকের পরামর্শে সাঁতরে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার মিশন সমাপ্ত করতে হলো তাকে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকালে হরিণাপাটিতে পৌঁছার পর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার সঙ্গে থাকা চিকিৎসক দল।
সোমবার ভোর সাড়ে ৬ টায় সিলেটের কীন ব্রিজ এলাকা থেকে সাঁতার শুরু করেন একুশে পদক জয়ী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২৮১ কিলোমিটার পথ সাঁতরে ভৈরব ফেরিঘাটে গিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নাম তুলতে চেয়েছিলেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডার (সাবেক) বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হরিণাপাটি এলাকায় সুরমা নদী অতিক্রমকালে ক্ষীতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দুর্বল হয়ে পড়েন। তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এ অবস্থায় সঙ্গে থাকা চিকিৎসক তাকে পানি থেকে উঠে আসার পরামর্শ দেন। প্রথমে রাজি না হলেও সবার অনুরোধে তিনি শেষ পর্যন্ত সাঁতার শেষ করে উঠে আসেন। এ যাত্রায় ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ এই চার জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণ অতিক্রমের কথা ছিল।
নৌ পুলিশ সুপার সম্পা ইয়াসমীন জানান, নৌ পুলিশের একটি টিম তার সঙ্গে অন্য একটি নৌকায় সর্বক্ষণ ছিল।
উল্লেখ্য, ছাত্রজীবন থেকেই দেশসেরা সাঁতারু হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য (৭০) একাধিক জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী। ৬৭ বছর বয়সে ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতার কেটে রেকর্ড গড়েন তিনি। বর্তমানে সাঁতার কেটে সবেচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারী স্প্যানিশ নাগরিক পাবলো ফার্নান্দেজ। ৭০ বছর বয়সে ২৮১ কিলোমিটার সাঁতরে রেকর্ডটি নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালের ২৩ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাধিক জাতীয় রেকর্ডের পর অবিরাম সাঁতারু হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়তে নেমেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে ছাতক নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রংগারচর ইউনিয়নের হরিণাপাটি গ্রামের পাশে সুরমা নদী অতিক্রমকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা। যে কারণে চিকিৎসক তাকে বলেন, সাঁতার কাটা অব্যাহত রাখলে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হবে। পরে তাকে নৌকায় তুলে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও বলেন, গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ৩২ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন তিনি। পরে বিকাল ৪ টায় সুনামগঞ্জ শহরের উকিল পাড়ার রিভার ভিউ ঘাটে তাকে নৌকা থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে প্রথমেই সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রিভার ভিউ ঘাটে তাকে বহনকারী নৌকাটি পৌঁছালে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুম হেলাল, দিলাল আহমদ, জাকির হোসেন, কর্ণ বাবু দাসসহ নেতা-কর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
এসজি