প্রেমের বিয়ের ৬ মাস পর গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক
প্রেম করে বিয়ের ৬ মাস পর বগুড়ার আদমদীঘিতে সৈয়দা সারাহ্ আহমেদ প্রিয়াসা (২৩) নামে এক গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় স্বামী নাসরুল্লাহ হক ঐক্যকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা সদরের ডহরপুর গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রিয়াসা ওই গ্রামের নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের (২৮) স্ত্রী। আর নাসরুল্লাহ হক ঐক্য আদমদীঘি রহিম উদ্দীন ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক আনোয়ারুল হক পল্টুর ছেলে। প্রিয়াসা নওগাঁ শহরের মাস্টার পাড়া মহল্লার জসিম উদ্দিনের মেয়ে।
নিহতের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের সঙ্গে সৈয়দা সারাহ্ আহমেদ প্রিয়াসার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সুবাদে গত ১০ মার্চ কৌশলে প্রিসারাকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিয়ে করেন নাসরুল্লাহ। বিয়ের পর থেকে তাকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত নাসরুল্লাহ। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যেও মনোমালিন্য চলে আসছিল। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বিকালে প্রিয়াসাকে নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পায় পরিবারের লোকজন।
প্রিয়াসার শ্বশুর বাড়ির সদস্যের দাবি, প্রিয়াসা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু প্রিয়াসার মা, ভাই ও বোনের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রিয়াসার বড় বোন শারমিন আক্তার লাবনি ও ভাই সৈয়দ আদনান বলেন, নাসরুল্লাহ’র সঙ্গে প্রিয়াসার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নাসরুল্লাহ মাদকাসক্ত হওয়ায় বোন তাকে বিয়ে করতে চাইত না। গত ১০ মার্চ দুপুরে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে বোনকে ডেকে নেয় নাসরুল্লাহ ও তার বাবা আনোয়ারুল হক। পরে সেদিনই তাদের বাড়িতেই বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের পর ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। মারা যাওয়ার আগের রাতেও বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে সে খুব কষ্টের মধ্যে আছে। বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
নাসরুল্লাহ’র মা খন্দকার নিসাত বলেন, ছেলের বন্ধু বেড়াতে আসে। বিকালে তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য স্টেশনে যাবে। কিন্তু ছেলের বউ তাকে স্টেশনে না যেতে বারবার নিষেধ করার পরও সে যায়। সেসময় বাড়িতে আমি, ছেলের বাবা এবং ছেলের বউ প্রিয়াসা ছিল। বউ তার ঘরেই ছিল। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে খাওয়ার জন্য অনেক ডাকাডাকি করা হয়। কিন্ত ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানালা দিয়ে দেখি প্রিয়াসা ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। ফ্যান থেকে নামিয়ে ওড়না কেটে চোখমুখে পানি ছিটানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। মৃত্যু রহস্যজনক হওয়ায় গৃহবধূর স্বামী নাসরুল্লাহ হক ঐক্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসজি