আখাউড়ায় গণকবরের সাইনবোর্ড ছুড়ে ফেললো 'বিএসএফ'
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ প্রায় আড়াইশ মুক্তিযোদ্ধার গণকবরের (সেনারবাদী-বধ্যভূমি) স্মৃতিফলক খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আখাউড়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তারা এ কাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ‘২০২১/আই-এস’ সীমান্ত পিলারের প্রায় ২০ গজ দক্ষিণে সেনারবাদী গ্রামের বাংলাদেশ অংশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবি কোনো পতাকা বৈঠক বা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেনি। তবে আগরতলা বিএসএফ এর কাছে ফোন করে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।
খবর পেয়ে আখাউড়া ৬০ বিজিবি জওয়ানরা এবং মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রতিবাদ জানান। ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, ‘বিষয়টি সুলতানপুর বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব। তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে।’
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সেনারবাদী গ্রামের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা দক্ষিণ রামনগর সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে (সীমান্তের শূন্যরেখায়) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহিদের গণকবরটির অবস্থান। সেখানে গত ৫০ বছর ধরে এক প্রকার অযত্ন ও অবহেলায় শুয়ে আছেন অন্তত ২৫০ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি হাসপাতালে যেসব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মারা যেতেন তাদের এখানে এনে দাফন করা হতো। তাছাড়া পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদেরও এখানে দাফন করা হয়েছিল। কোনো কোনো কবরে তিন-চারজনকেও সমাহিত করা হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসহাক মিয়া, মোশাররফ হোসেনসহ একাধিক লোকজন জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৭/৮জন সশস্ত্র ভারতীয় বিএসএফ জওয়ান বাংলাদেশের সেনারবাদী সীমান্তে আসে। এ সময় বিএসএফ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে স্মৃতিফলকের সাইনবোর্ডটি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা যুবক মোশাররফ হোসেন প্রতিবাদ করলে বিএসএফ তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ধমক দিয়ে তার দিকে তেড়ে আসে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আখাউড়া আইসিপি বিজিবিকে অবহিত করেন। এ সময় বিজিবি জওয়ানদের আসতে দেখে বিএসএফ জওয়ানরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
আখাউড়া বিজিবি কোম্পানি সদর ব্যাটালিয়নের নায়েক মো. আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করেছি। বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরা স্বিদ্ধান্ত নিয়েছি সাইনবোর্ডটি আবার আগের জায়গায় বসিয়ে দেবো।’
/এএন