ছোট কাঁধে সংসারের ভার
অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলে ছয় সদস্যের পরিবারটির। নাজমুল (১৪) সে পরিবারের সন্তান। তার বাবা রাজমিস্ত্রী রফিকুল ইসলাম। তিনি ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচসহ সংসার চালাতে হিমশিম খান। যে কারণে নাজমুল নিজের ছোট কাঁধে তুলে নিয়েছেন সংসার চালানোর দায়িত্ব। পথে পথে হাওয়াই মিঠাই বেচে সে।
যে বাইসাইকেল চালিয়ে নাজমুল স্কুলে যেত, সেই বাইসাইকেল চালিয়ে হাওয়াই মিঠাই ফেরি করে বিক্রি করছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল।
দিনশেষে সব বেঁচে ফের সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরে সে। বাণিজ্যের আয়ের কিছু পড়ালেখার খরচের জন্য রেখে দেয়। বাকি টাকা তুলে দেয় বাবা-মার হাতে।
বৃহস্পতিবার শীতের সকালে সবে উঁকি দিয়েছে মিষ্টি রোদ। নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী এলাকায় দেখা মেলে হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালা শিশু শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামের। পিছনে দুজন ক্রেতা। এক জনের বয়স ৪২ বছর, অন্য তার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট। তাদের ডাকে সে দাঁড়িয়ে ওই দুই ক্রেতার কাছে হাওয়া মিঠাই বিক্রি করছিল।
কথা হয় নাজমুলের সঙ্গে। সে জানায়, তার বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের নেওয়াশী মোল্লাপাড়ায়। সে নেওয়াশী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ৪ ভাই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। দ্বিতীয় ভাই নাহিত ৪র্থ শ্রেণি, তৃতীয় বোন রহিমা খাতুন তৃতীয় ও ৪র্থ ভাইয়ের বয়স ৪ বছর। এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি।
করোনাকালে উপার্জন কমে যাওয়ায় কষ্ট করে দিন কাটে তাদের। স্কুল খোলা থাকলেও সপ্তাহে দুটি ক্লাস থাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধের সে সংসারে সহযোগিতা করতে বেছে নিয়েছে এ পেশা। প্রতিদিন ২শ হাওয়া মিঠাই কারখানা থেকে কিনে নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে বিক্রি করে। দুই ধরনের হাওয়া মিঠাই বেচে সে। ছোট আকারের মিঠাইতে লাভ ২ টাকা, বড় মিঠাই বিক্রি করলে লাভ হয় ৩ টাকা। সারা দিন ধরে ২শ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি শেষে তার আয় হয় ৪০০ টাকা।
নাজমুলের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সামান্য রাজমিস্ত্রী। সামান্য আয় দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশুনাসহ সংসার চালানো খুব কষ্টকর। আমার ছেলে সংসারের অবস্থা দেখে নিজে থেকে হাওয়াই মিঠাই বিক্রির কাজ শুরু করেছে। এ কাজে তাকে বাধ্য করা হয়নি। স্কুলে প্রতিদিন ক্লাস শুরু হলে এ কাজ তাকে দিয়ে করাবো না।’
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা ছেলেটি খুব পরিশ্রমী। সে এই বয়সে পরিশ্রম করে নিজের পড়াশুনার খরচ বহন করছে, পাশাপাশি পরিবারের অভাব দূর করছে! আমাদের উচিৎ এ ধরনের ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো।
এসিআর/এএন