কুষ্টিয়ায় বেপরোয়া প্রায় ৫শ ১০ চাকার বালুবাহী ড্রাম ট্রাক
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় আইন অমান্য করে ওভারলোড নিয়ে শহরে বা গ্রামে বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫০০টি ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক। তবুও নীরব প্রশাসন।
এসব যানের চাকার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক এখন ভেঙেচুরে একাকার। প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্য পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা, প্রাণ হারাচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষ।
গত দুইদিন বালুবাহী ট্রাকের চাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে নারীসহ সাতজনের বেশি মানুষকে। দণ্ডবিধিতে কোনো সরকারি সম্পদের ক্ষতি করলে এর শাস্তি বিধান নিশ্চিত করা আছে। ৪৩১ ধারা মোতাবেক সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেলসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ রহস্যজনক কারণে প্রশাসন ও পুলিশ একেবারে নীরব ভূমিকায়!
জানা গেছে, জেলার শহরতলীর রানাখড়িয়া-কদমতলা, তালবাড়িয়া, জুগিয়া-বারখাদা-ভাটাপাড়া, হরিপুর সেতু-মন্ডলপাড়া, কুমারখালীর মীর মশাররফ হোসেন সেতু এলাকা এবং কুমারখালী ও খোকসার বিভিন্ন সংযোগ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এ সব বালুবাহী ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে। এরমধ্যে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া-ভাটাপাড়া সড়ক গত ৫ বছরে দুইবার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভার নিয়ে ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটির এখন বেহাল দশা।
জানা গেছে, এ সড়কে চলা ট্রাকের বেশিরভাগ কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম ও তার স্বজনদের। তারা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। তার মালিকানাধীন দুটি বালুমহাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ গাড়ি বালু জেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক নামছে নদীর তীরে। প্রতিটি ১০ চাকার ট্রাক বা ডাম্পার বহন করছে অন্তত ৪৫-৫০ মেট্রিক টন বালু। ছয় চাকার ডাম্পার বহন করছে ২৫-৩০ টন। পাঁচ টন বহন ক্ষমতার ট্রাকে বালু যাচ্ছে ১১-১৪ টন। আর অনভিজ্ঞ চালকরা চালাচ্ছে বেপরোয়াভাবে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক। কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো আইন প্রয়োগ না করে শুধু মোটরসাইকেল ধরপাকড় করছে সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দুই পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, হুমকির মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য।
ওভার লোড বহন ও অবৈধ ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাক পরিচালনার বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণের জন্য বালুমহালের ইজারাদার মহিদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওভারলোড নেওয়া এসব বালুবাহী ট্রাকে সড়কের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ ওভারলোড। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।’
বিআরটিএ, কুষ্টিয়া সার্কেলের সহকারী পরিচালক এটিএম জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ওভারলোড বহন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এসএ/এএন