শেরপুরে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার দুই
শেরপুরে তিন শতাধিক পাওনাদারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে থাকার অভিযোগের মামলায় বাবর অ্যান্ড কোং (প্রা.) লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান সুজন ও তার মা কামরুন নাহার হাসেমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাজধানী ঢাকার রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। পরে বুধবার (২৪ আগস্ট) গ্রেপ্তারকৃতদের শেরপুর সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫০টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তারা বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকগুলো মামলা থাকায় তাদের আদালতে সোপর্দ করতে দেরি হলেও আজই তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর শহরের নারায়ণপুর এলাকাস্থ বাবর অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবুল হাসেম অগ্রিম ইট বিক্রি করে এবং ধান ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বাকিতে ধান কিনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ৩৬ একর জমির ওপর স্থাপিত তাঁর প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে দুটি অটো ব্রিকফিল্ড, তিনটি ফিলিং স্টেশন, একটি অটো রাইস মিল, পোল্ট্রিফার্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং জেলা হাসপাতাল রোডের কাছে তিনতলা বাড়ি ও বাগান রয়েছে।
২০১৮ সালে আবুল হাসেমের মৃত্যু হলে তাঁর জানাজায় জ্যেষ্ঠ পুত্র কামরুজ্জামান সুজন পিতার ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসা পরিচালনা করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। এতে আশান্বিত হয়ে অনেকে পুনরায় অগ্রিম ইট কেনা ও বাকিতে ধান বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু মালিক পক্ষ পরস্পর যোগসাজশে অগ্রিম ইট বিক্রির ৪৫ কোটি টাকা ও চাল বিক্রির পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রাখেন।
এক পর্যায়ে রাতের আঁধারে সুজনসহ তার পরিবারের লোকজন ঢাকায় পালিয়ে যান এবং পাওনাদারদের টাকা ফেরত দিকে গড়িমসি শুরু করেন। পরবর্তীতে অনেক পাওনাদার টাকা না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এসব মামলার মধ্যে তিনটিতে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কারাদণ্ড হয়। বাকী ৪৭টি মামলার কয়েকটি তদন্তাধীন ও কয়েকটি বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে, পাওনা টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিন শতাধিক পাওনাদার। তাদের অনেকেই জমি-জমা বিক্রি করে, কেউবা পেনশনের টাকা বাবর অ্যান্ড কোং-এ রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন। পাওনা টাকা না পাওয়ায় আর্থিক অনটনে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সুজন ঢাকায় পালিয়ে আসার পর সাধারণ মানুষ তাকে গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করাসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন।
এএজেড
