লোকালয়ে হাতির পাল, আতঙ্কে ১০ গ্রামের মানুষ

জামালপুরের বকশীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে ১০ গ্রামের মানুষের মাঝে বন্য হাতি আতঙ্কে বিরাজ করছে। গত ৭ দিন যাবত পাহাড়ি টিলায় অবস্থান করছে ভারতীয় বুনো হাতির পাল। সুযোগ পেলেই লোকালয়ে নেমে এসে ফসলি জমি ও ধান ক্ষেতে চালাচ্ছে তাণ্ডব। রাত জেগে পাহাড়া দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক-ঢোল পিটিয়ে হাতির আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে কাঁচা বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল নিয়ে শঙ্কিত পাহাড়ি এলাকার মানুষ।
জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার ভারতের কাঁটা তারের বেড়া পেড়িয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি বন্য হাতি বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের লোকালয়ে প্রবেশ করে। রাতভর পাহাড়ের উচু টিলায় অবস্থান করে হাতির পালটি। রাতের বেলায় তারা লোকালয়ে নেমে চালায় তাণ্ডবলীলা। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, সবজি ক্ষেত ও বোরো ধান খেয়ে বিনষ্ট করে।
দিনের বেলায় হাতির পাল পাহাড়ের উচু টিলায় অবস্থান করলেও রাতে দলবেঁধে সেগুলো নেমে আসে লোকালয়ে। তাড়াতে গেলেই বাড়িঘরে হামলা চালায় হাতির পাল। ফলে অশেনা কোনা, সাতানীপাড়া, শোমনাথপাড়া, বালুরচর, টিলাপাড়া, পাগল গোছা, দিঘলা কোনা, সোমনাথপাড়া ও হাতিবারকোনাসহ সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষের মধ্যে হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওইসব এলাকার মানুষের দিন কাটছে শঙ্কায়, রাত কাটছে নির্ঘুম। জমির কাঁচা ধান, করল্লা, শিমুল আলুসহ ফসল বাঁচাতে রাতের বেলা আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক-ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করছেন সীমান্তের মানুষ।
এ ব্যাপারে অশেনা কোনা এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলাম দ্বীপ বলেন, গত ৭ দিন যাবৎ হাতির পাল পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে। রাতে নেমে আসছে লোকালয়ে। ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহাড়া দিতে হচ্ছে হাতি। আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক-ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও থামানো যাচ্ছে না হাতির তান্ডব।
এলাকার কৃষকরা বলেন, প্রতি বছর হাতি আমাদের ফসল বিনষ্ট করে। অনেক কষ্ট করে ধান চাষ করেছি। বিগত বছরে ধান পাকা শুরু হলে হাতি আসে। এবার ধান পাকার আগেই চলে এসেছে। হাতির ক্ষতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রাহুল রাকসাম বলেন, ‘হাতির ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। সারাক্ষণ শঙ্কিত থাকি, কখন হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালায়। ভয়ে ভয়ে দিন কাটে আমাদের। পাহাড়ি এলাকার মানুষের হাতিই এখন বড় শত্রু। হাতি সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান চাই আমরা।’
এ ব্যাপারে ধানুয়া কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি জানান, আমার ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তবর্তী। হাতিই বড় সমস্যা এই অঞ্চলের মানুষের। সীমান্তে হাতির বিষয়টি স্থায়ী সমাধান দরকার।
