আইন উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে গ্ৰাম

নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে নদী থেকে আইন উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন যেন থামছেই না। দীর্ঘদিন ধরে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদ থেকে উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের লেপসিয়া বাজার থেকে গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট বাজার পর্যন্ত একদল বালুদস্যু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ধনু নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। ফলে সরকার যেমন হারাচ্ছে রাজস্ব, ঠিক তেমনি নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো পড়ছে হুমকির মুখে।
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে মেন্দিপুর ইউনিয়নের নুরালীপুর, রসুলপুর ও গাজীপুর ইউনিয়নের চরগ্রাম দিনে দিনে বিলীন হয়ে পড়ছে যেন দেখার কেউ নেই। জনমনে প্রশ্নের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কার ঈশারায় এভাবে বালু দস্যুরা বালু উত্তোলন করে চলছে। তারা কি এতই শক্তিশালী? গত ১৭ আগষ্ট গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট গ্রামের বাসিন্দা তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে 'ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই' শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন তাতে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরী হয়েছে।
তিনি তাঁর আইডিতে 'ভাসতে চাই না,বাঁচতে চাই' পর্ব (১) এ উল্লেখ করেন, খালিয়াজুরী উপজেলার ৬নং গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট গ্রামের চলতি ধনু নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে বিলীন প্রায় চরপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার। এই ভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে ধনু নদীতে বিলীন হয়ে যাবে পুরো পাচঁহাট গ্রাম ও দৈলং বিলের পাশে থাকা গ্রামের ধানের ফসলি জমি।
সরেজমিন দেখা যায়, অবৈধভাবে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ৫ থেকে ৭টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর তা ৮-১০ টি ভল্কহেড ও কার্গো দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। এইভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ। যে চক্রটি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে তাদের এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমতি বা অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু। পেশিশক্তির বলে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে।
এ জন্য এলাকায় মধ্যে চরম ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। জানতে চাইলে ড্রেজার মালিক সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, আমরা সবসময়ই স্থানীয় চেয়ারম্যানের লোক। যখন যে চেয়ারম্যান থাকেন ওই চেয়ারম্যানের একটি সিন্ডিকেট থাকে, তাদের তত্ত্বাবধানে আমরা এই বালু উত্তোলন করি।
প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে টাকার পাহাড় গড়ছে। আর বালুর উত্তোলনের প্রভাবে চড়পাড়া প্রায় বিলুপ্তের পথে এবং পাঁচহাট গ্রাম সহ ধনু নদীর পাড়ের ফসলি জমি ঝুঁকিতে। নিজেদের বসত ভিটার টানে সকলে এগিয়ে আসুন। চুপ থাকা মানে নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনছেন! ধারাবাহিক এই দুর্নীতি ও অনিয়ম এর পর্ব দেখার জন্য চোখ আমার এই ফেইসবুক আইডিতে।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ স্বাধীন বলেন,এ বিষয়ে আমার কোন হাত নেই। তবে শুনেছি ফেসবুকে অনেক লেখালেখি করছে তাতে আমি এ বিষয়ে সম্পৃক্ত নই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে চড়পাড়া গ্রাম ঝুকিতে পড়ছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন চলছে তবে এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবগত করেছি।
আব্দুর রউফ স্বাধীন আরো বলেন যারা বালু উত্তোলন করছে তারা নাকি বি আর টি এর অনুমতি নিয়ে এসেছে। অনুমতির কাগজপত্র নিজে দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
অপরদিকে চাকুয়া ইউনিয়নেও চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। লেপসিয়া বাজার কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লেপসিয়া বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আঃ কুদ্দুছ মিয়া তাঁর নিজস্ব কয়েকটি ড্রেজার মেসিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর নুরালীপুর ও রসুলপুর গ্রাম বিলীনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন,আমি নিজেও দেখেছি এ ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে। তবে বালু উত্তোলনকারীদের ধরার জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা যায়নি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেন। আইন উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন বন্ধে ও গ্রামগুলিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সরকার এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ।
এএজেড
