১২২ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ২৮ জন
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
মাত্র ১২০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট ও ২ টাকার আবেদন ফরম খরচেই মিলেছে ২৪ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীর চাকরি। প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর তাঁদেরকে পুলিশ সদস্য হিসেবে বরণ করে নিয়েছে জেলা পুলিশের সদস্যরা।
অর্থ বা ঘুষ লেনদেন ছাড়াই ২৮ জনকে চাকরি দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান পিপিএম সেবা।
শনিবার ( ২৩ মার্চ) পুলিশ লাইনস মাঠে এ সকল রিক্রুটিং পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে নিয়োগ সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয় ও সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আরএরম ফয়জুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন শুরু করেছিলাম, তখনি বলেছিলাম চুয়াডাঙ্গার সবাই যেন নিরপেক্ষভাবে এতে অংশ নিতে পারে। মেধাভিত্তিক, যোগ্য প্রার্থীরা যেন একদম বিনাপয়সায় চাকরি পাই, সে চেষ্টা আমরা করেছি। আমরা খুবই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি নিয়োগ প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত শতভাগ ন্যায়, নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি, এটা আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি।’
পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সকলের একমাত্র পূর্ব শর্ত ছিলো মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। তাদের অন্য কোনো পরিচয়, সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থান ভূমিকা পালন করেনি। সরকার কতৃর্ক নির্ধরিত ১২০ টাকা তাঁদের সরকারি খরচ ছিলো। জেলা পুলিশ সকল বিষয়ে খুবই তৎপর ছিলো।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি)পদে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ৮ টা হতে নিয়োগ কমিটি ১ম ধাপে চাকুরী প্রার্থীদের মধ্য থেকে Physical Endurance Test (PET) কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩০১জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেন। গত ১৬ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ (শনিবার) সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ, চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক বাছাইকৃত ৩০১জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্য থেকে পরবর্তীতে ৬৫ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২৩ মার্চ ২০২৪ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে হতে মেধা,যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৪ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়েসহ মোট ২৮জন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে ২৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সাধারণ কোটায় ১৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জন এবং পুলিশ পোষ্য কোটায় ২ জন বাংলাদেশ পুলিশের রিক্রুটিং পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দীকুর রহমান বলেন, বর্তমানে সরকারি চাকরি মানে সোনার হরিণ। আর সেই চাকরির প্রত্যাশা থাকে যোগ্য-অযোগ্য সবারই। ব্যবধান হয়ে দাড়ায় মধ্যস্বত্তভোগী এক শ্রেণির দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়। এমন পর্যায়ে যখন চাকরি প্রত্যাশীরা দিশেহারা, তখন অবৈধ অর্থ বা ঘুষ লেনদেন ছাড়াই চুয়াডাঙ্গার ২৮ জনকে চাকরি দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান । তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।'
নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার, চুয়াডাঙ্গা চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ২৮জন তরুণ-তরুনীকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন ও বাংলাদেশ পুলিশে স্বাগত জানান।
শনিবার (২৩ মার্চ) রাত ০৯ টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে নতুন চাকরি পাওয়া এই তরুণ-তরুণীদের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার, চুয়াডাঙ্গা। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিজ মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন চুয়াডাঙ্গার তরুণ-তরুণীরা। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, বিশেষ শাখা ও থানা পুলিশ সদা সচেষ্ট ছিল যেন চাকরী প্রত্যাশী বা তাদের পরিবার যেন কোন প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয় এবং প্রতারিত না হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ কামরুল আহসান, মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ডিআইও-১ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীর সঙ্গে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।