নওগাঁয় কাঁচা মরিচের দামে খুশি চাষিরা, অখুশি ক্রেতারা
নওগাঁয় অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলায় মরিচের দাম বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। এদিকে বেশি দামে মরিচ বিক্রি করে চাষিরা খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। কাঁচা মরিচ নিত্য প্রয়োজনীয় হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
চাষি, ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে যে মরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই মরিচ বর্তমানে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও বদলগাছি উপজেলায়।
বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট) নওগাঁ মহাদেবপুর উপজেলার মমিনপুরে সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচ বিক্রির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন চাষিরা। সেগুলো আবার ব্যবসায়ীরা কিনে নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকে। এই বাজারে প্রতি মন কাঁচা মরিচ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। ভালো দামে মরিচ বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরাও।
মরিচ বিক্রি করতে আসা আবুল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে খরা হওয়ায় মরিচের ফলন কমে গেছে। এক মাস আগে দুই বিঘা মরিচের খেত থেকে প্রতিদিন ৫০ কেজি মরিচ পেতাম, এখন পাচ্ছি মাত্র ২০ কেজি। তবে বাজারে এবার মরিচের দাম ভালো রয়েছে। আজকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে ১৫ কেজি মরিচ বিক্রি করলাম।
তিনি আরো বলেন, বাজারে ৩০ কেজি মরিচ ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি জন্য নিয়ে এসেছিলাম। ১৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলাম। বাজারে যদি এ রকম মরিচের দাম থাকে তাহলে আমরা চাষিরা ভালো লাভবান হব।
মহাদেবপুর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের মরিচ চাষি মকবুল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এক বিঘায় মরিচ চাষ করতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। মরিচের ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমি থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মরিচ বিক্রি করা যায়।
আরেক মরিচ চাষি আক্কাস ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। কিন্তু খরার কারণে মরিচের গাছে ফুল আসলে সেই ফুল লাল হয়ে ঝড়ে পড়ে যায়। ফলে ফলন তেমন নেই। তবে বাজারে মরিচের ভালো দাম আছে।
এ বিষয়ে মমিনপুর কাঁচা মরিচ বিক্রির পাইকারি বাজারের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই বাজারে মাসখানেক আগে ১২০০ থেকে ১৩০০ মণ মরিচ বেচাকেনা হতো। বর্তমান বেচাকেনা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ। ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বর্তমান প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা মরিচ বেচাকেনা হচ্ছে।
বেচাকেনা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন খরার কারণে মরিচের ফলন কমে গেছে। তবে চাষিরা এবার ভালো দাম পাচ্ছে মরিচের।
এদিকে নওগাঁ পৌরসভার পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
পৌরসভা কাঁচাবাজারে গিয়েও দেখা যায়, পাইকারি বাজারের তুলনায় সেখানে প্রতি কেজি মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পৌর কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচের দাম চাইছেন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
এদিকে খুচরা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান বলেন, কৃষকের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে মরিচ বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত খরার কারণে মরিচের ফলন কমে গেছে। ফলে আমদানি কম। আর এ সময় একটু মরিচের আমদানি কমই হয়। ১৫-২০ দিন পর থেকে হয়তো মরিচের আমাদানি বাড়বে।
অপরদিকে বাজার করতে আসা খুরশিদ আলম বলেন, এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আজ কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রিকশাচালক আয়েন উদ্দিন বলেন, এসব লিখে কী করবেন? গরিব হয়ে আমাদের কপাল পুড়েছে। এক সপ্তাহ কমলে পাঁচ সপ্তাহ দাম বাড়ে। এটাই আমাদের নিয়তি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একে এম মনজুরে মাওলা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মরিচ গাছ অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। ফলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মরিচের ফলন কিছুটা কমেছে। তবে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ফলন ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, অধিক বৃষ্টিপাত হলেও মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব কৃষক মরিচ খেতের সঠিক যত্ন নেন তারা বেশি লাভবান হবেন। তবে এখন যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাই গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
এসআইএইচ