ভাবনায় তুমি...
আমি খুঁজে ফিরি তোমাকে আমার কাব্যে, আমার কলমের আঁচড়ে, খুঁজে ফিরি তোমাকে দিগন্ত ঘেরা সবুজের সমারোহে, খুঁজে ফিরি গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খুশির নবান্নের উৎসবে। যখন কৃষানী বধু ধান ভাঙ্গার জন্য ঢেঁকিতে পা রেখে মুচকি হাসে, মনে হয় আমার বধুয়া আমায় দেখে হাসছে।
তুমি মিশে আছো সকালের মিষ্টি রোদে, দুপুরের শীতল ছায়ায়, বিকেলের আবেগী দিগন্তে, সন্ধ্যার গোধূলিতে, রাতের জোৎসনায় কিংবা অন্ধকারের ঝি ঝি পোকার ডাকে, মিশে আছো তুমি জোনাকির আলোয়। তুমি মিশে আছো ভোরের শিশির বিন্দুর মাঝে। ওগুলো সবই তোমার উপছায়া, সত্যিকারের তুমি মিশে আছো আমার হৃদয়ের গভীরে।
রজনীর কালো ছায়া যেমন প্রকৃতির সব রূপ লুকিয়ে ফেলে তেমনি তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমিও আমার আমিত্বকে হারিয়ে ফেলি। কৃষাণী বধুর কুলোর বাতাসে যেমন ধানগুলো পরিষ্কার হয়ে পবিত্র হয়, তেমনি তোমার সান্নিধ্যে নিজেকে তৃপ্তিত ও পবিত্র লাগে। তোমার নয়ন ভোলানো চোখের দিকে তাকিয়ে এত ভালো লাগে যেমনটি কালো ঘন মেঘ কেঁটে যাবার পর সূর্যের পরশ পেয়ে বৃক্ষলতা জেগে ওঠে নতুন ধারায়। তোমায় যখন স্পর্শ করি, আমার মন আনন্দে পুলকিত হয়, যেমনটি হয় শীতে কম্পনরত কোন বৃদ্ধা কম্বল বা মোটা কাপড়ের আলিঙ্গন পেলে।
তোমাকে ভেবে অনেক কিছুই লিখতে চাই কিন্তু পারি না। ভাষাগুলো উড়ে উড়ে যায়, ধরতেও পারি না,কথামালাও সাজাতে পারি না। ভাবনাগুলো এভাবেই হারিয়ে যায়।
জগতের সীমিত সময়কে জয় করে যদি অনন্তকালের দেখা পেতাম তবে তোমাকে উঠিয়ে সেথায় অনন্তকালের বাসা বাঁধতাম। জগতের নির্ধারিত স্বল্প পথটুকু তোমার হাত ধরে চলতে চলতে শেষ ধাপে এসে হয়তো তোমায় জড়িয়ে ভীষণ কাঁদবো, ওই সময়টুকু খুব নিষ্ঠুর হবে, শেষ দর্শন, শেষ স্পর্শ! আমার অর্ধ আত্মাকে ছেড়ে চলে যাওয়া খুব বেদনা গভীর হবে কারণ আমার পরবর্তী ধাপ পড়বে পরকালে। ঈশ্বরের ধুলোধরা জগতে তোমাকে পাওয়া ছাড়া আমার আর কোন সার্থকতার দেখা মেলেনি।
মাঈন উদ্দীন, কুষ্টিয়া