জীবনবোধ
নদীর তটে দাঁড়ালেই বুঝা যায়, নদী কতটা বহমান! কত স্রোত বয়ে যায় তার বুক চিড়ে! তার মন জুড়ে উঠে কত উত্তাল ঢেউ! কত ভাঙা-গড়ার খেলা! অথচ মানুষ! মানুষ নিজের দিকে তাকায় না। মানুষের জীবনগতি যে তার চেয়েও বেশি বহমান, তার জীবনপাড়ায় যে তার চেয়েও বেশি ভাঙা-গড়ার মহোৎসব, সে তা জানলেও মানতে চায় না। প্রকৃতি কত আকারের আবরণে সজ্জিত! অথচ মানুষকে দেখো, সে কিছু নিরাকার অনুভূতিতেই অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়। জীবনবোধটা বড্ড খারাপ একটা জিনিস। কেউ একবার মায়ায় পড়লে, সে মায়া আর কাটিয়ে উঠতে পারে না। এটাই তার জীবনবোধ হয়ে পড়ে।
যে ঘুমের ঘোরে তন্দ্রাচ্ছন্ন, তাকে যদি বলা হয়, তোমার কাছে জীবন মানে কী? সে নির্দ্বিধায় উত্তর দিবে, জীবন মানে ঘুম আর ঘুম। এইতো, ঘুমই তার কাছে তখন জীবনবোধ মনে হবে। প্রতিটি মানুষই এমন। এজন ছাত্রকে যদি বলি, তুমি এত পড়ালেখা করছ। আচ্ছা বলোতো, তোমার জীবনে তুমি কেন পড়ালেখা করতে চাও? সে তখন অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে মৃদু অথবা উচ্চস্বরে বলবে, এটা হব, ওটা হব ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন ছাত্রের কাছেও তার জীবনবোধটা এরকম। সেও চায় পরাধীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী জীবন।
যে দিনমজুর তাকে যদি বলি, আপনার কাছে জীবন মানে কী? সেও বলবে, জীবন মানে কঠুর পরিশ্রম আর সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা। এইতো একেকজনের কাছে একেকটা জীবনবোধ। তবে, আমি বলব জীবনবোধটা না থাকাই শ্রেয়। না হয় জীবনটাকেই উপলব্ধি করতে পারা যায় না। হয়তো কোন একদিকে ঝুকে যেতে হয়। জীবনটাকেও সে দিকে নিয়ে নতুন এক জীবনবোধের সংজ্ঞায়ন তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। এইতো মানুষ! আজব মানুষ!
এইতো নদীর বুকেই কেউ জেলে, কেউ মাঝি, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ গবেষক, কেউ পর্যটক, কেউ বা অন্যকিছু। এক নদীর একই স্রোতে কত মানুষের কত রকম জীবনবোধ। আসলেই কি জীবনবোধটা তাই? কেউ যদি বলে, তোমার কাছে জীবনবোধের মানেটা কী? আমি চিৎকার করে বলব, আমি মানুষ ও মানুষের জন্য। এটাই আমর জীবনবোধ।
রেদ্ওয়ান আহমদ
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়