রাগ শয়তানের অস্ত্র
মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণার ক্ষেত্রে ক্রোধ তথা রাগ হচ্ছে অভিশপ্ত শয়তানের অস্ত্র। শয়তান মানুষকে ক্রোধের বশবর্তী করে বিচ্যুতির ফাঁদে ফেলে বিপথগামীতার দিকে নিয়ে যায়।
রাগ বা ক্রোধ মানবজীবনে সবচেয়ে ভয়ানক শত্রু। মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে না, তার স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়। ফলে তিনি যেকোনো অঘটনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারেন। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার নিমিত্তে মনোবিদরা নানাবিধ উপায়ের কথা বলেছেন।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কারিমেও রয়েছে প্রচুর দিকনির্দেশনা। রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলাম সর্ব প্রথমে অন্যের ভুল ভ্রান্তিকে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখার কথা বলে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে যারা অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখে, তারা যখন ক্রোধান্বিত হন, তখন আত্মসংবরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তারা সচল মানুষ। রাগ কমানোর কৌশল হিসেবে ইসলাম মানুষকে তাকওয়া ও পরহেজগারিতা অবলম্বনের কথা বলে।
এ ছাড়া ওযু কিংবা গোসল করা, পারলে সিজদায় অবনত হওয়া, অবস্থার পরিবর্তন সাধন অর্থাৎ বসা অবস্থায় ক্রোধান্বিত হলে উঠে দাঁড়ানো, দাঁড়ানো অবস্থায় ক্রোধের শিকার হলে বসে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া বেশি বেশি ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ অথবা ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম’ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘রাগ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে, হিংসা মানুষের নেক আমলকে ধ্বংস করে, আর মিথ্যা মানুষের হায়াত কমিয়ে দেয়।’
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।
এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না’। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, ‘রাগ করো না’। (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)।
হাদিসে এসেছে— ‘সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেন। বরং সেই প্রকৃত বীর, যিনি রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।’
হে মহান আল্লাহ সবাইকে রাগ থেকে মুক্তি ও ধৈর্যশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরএ/