মির্জা আজমের ক্ষোভ, সতর্কতা
ঘর বানাতেও চাঁদা নিচ্ছে নেতা-কর্মীরা
আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। তিনি বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দলের নেতৃত্বে যারা আছেন তারা অনেক কাজ করেন কিন্তু সমস্ত অর্জন বিসর্জন হয়ে যায় যখন সন্ধ্যা বেলায় রেডিও টিভি’র স্ক্রলে দেখি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারা মানুষ বাড়ি-ঘর করতে গেলে তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়।’
রোববার (০৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৮ নং ওয়ার্ড ইউনিট আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।
মির্জা আজম আরও বলেন, 'এই তো গত তিন-চার দিন আগে একটি পত্রিকায় নিউজ হলো। সেই নিউজ দেখে আমি লজ্জা পেয়েছি। আমার ঘনিষ্টদের কমপক্ষে ১০ জন ফোন করেছেন, কারণ আমি ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। আমি নাকি এই আওয়ামী লীগের সমস্ত দায়িত্বে আছি। সেই আওয়ামী লীগ যদি মুগদা এলাকা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে। কেউ বাড়ি ঘর করতে গেলে চাঁদা কালেকশন করে, একবার ছাত্রলীগ নিয়ে যায়, আবার আসে যুবলীগ, যুবলীগের নিয়ে যাওয়া শেষে আসে আওয়ামী লীগ। আজকে যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, যারা অন্যের জমি দখল করে তাদের যদি আমাদের নতুন নেতৃত্বে আনতে হয় তাহলে এই পরিশ্রম স্বার্থক হবে না।'
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দলের প্রতি যাদের ত্যাগ আছে, দলে অতীতে যাদের অবদান আছে, যারা সৎ লোক হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত তাদের ঘর থেকে খুঁজে বের করে দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। তা না হলে আমরা যত রাস্তাঘাট বানাই, যত উন্নতি করি, যত হাতিরঝিল বানাই আওয়ামী লীগকে মানুষ ভোট দিতে আসবে না। কারণ ভোটার কারা? ভোটার তারাই যারা মুগদা এলাকায় বাড়ি-ঘর বানাতে গিয়ে চাঁদা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সুশৃঙ্খলভাবে দল করতে পারলে এই দল নিয়ে এগুতে পারব। উচ্ছৃঙ্খল দল দিয়ে বেশিদূর এগুতে পারব না।’
মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘মুগদা এলাকার ঘটনা যা পত্রিকায় এসছে সেই ঘটনা সত্যি হলে যারা ওখানে দায়িত্বে আছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর খবরটি মিথ্যা হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই। এখন যদি মনের জোর থাকে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করব। আর যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে যাদের দ্বারা এটি ঘটেছে, যাদের কারণে আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন হয়েছে, তাদের দল করতে দেব না। শুধু মুগদা এলাকায় নয় এই প্রেসক্রিপশন সব জায়গায় একই। সবাইকে দলের গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, দল ক্ষমতায় থাকায় আমরা অনেকে অতি সুবিধা নিয়ে অনেক বড় হয়েছি, অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওভাবে উন্নতি হয়নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু মোটা-তাজা হয়নি। অনাহারে-অর্ধাহারে মনে হয় দিন-দিন আওয়ামী লীগ শুকিয়ে গেছে। ইউনিট পর্যায়ে কোনো কমিটি নেই।’
তিনি বলেন, ‘যারা দলের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিন-রাত পরিশ্রম করে এই দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে দরিদ্রতম দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেছেন তিনি। মহাকাশ থেকে মহাসমুদ্র সবকিছুই তার দখলে রয়েছে। কিন্তু দলটিকে আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি।’
এসএম/এএন