নয়াপল্টনে সমাবেশ নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-আওয়ামী লীগ
ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে গণগ্রেপ্তার ও অনুমতির বেড়াজালে সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অনেকটাই চাপে ফেলে দিয়েছে অভিযোগ দলটির। এখন পর্যন্ত বিএনপির গণসমাবেশ নয়াপল্টনেই করবে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন দলটির নেতারা। যদিও নয়াপল্টনে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে অনড় সরকার।
এদিকে ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা বিএনপির। তাদের লক্ষ্য বড় জমায়েত করা। এর মাধ্যমে বিএনপি এটা প্রমাণ করতে চায় যে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নেই, বিএনপি এখন দেশের জনপ্রিয় দল। নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করার ক্ষেত্র অনড় থাকলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কৌশল কী হবে, এ নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে নয়াপল্টনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেবে।
দেশে এখন চলছে সমাবেশ পাল্টা সমাবেশ। এসব সমাবেশে নেতা-কর্মীসহ জনগণের উপস্থিতির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা করছে বড় দুই রাজনৈতিক দল। এসব নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। শনিবার রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ চলছে। আগামীকাল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভা। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে টান টান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি চাচ্ছে গণসমাবেশ হবে নয়াপল্টনে তাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে বলা হয়েছে, বিএনপিকে গণসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করতে হবে। এরপর থেকে রাজনীতির মাঠে বড় দুই রাজনৈতিক দল মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এদিকে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে জনসভা শুরু করেছে দলটি। যশোরের পর আগামীকাল চট্টগ্রামে হবে জনসভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি সবদিক বিবেচনা করে নয়াপল্টনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিলেও পুলিশ শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য ‘জোরজবরদস্তি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপির গণসমাবেশে জনতার বিপুল সমাগম দেখে আওয়ামী সরকার তেলেসমাতি শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। পরিকল্পিত নাশকতার সৃষ্টি করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার।
বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয়ভাবেও ঢাকায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, তাদের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেখে দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ডেও তাদের অবস্থান থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে বেশকয়েকটি প্রস্তুতি বৈঠকও হয়েছে। তবে বিএনপির কর্মকাণ্ড, তাদের প্রস্তুতি, লোক জমায়েতের পরিস্থিতি দেখে শেষ মুহূর্তে নতুন কৌশল বা পরিকল্পনাও নেওয়া হতে পারে। ১০ ডিসেম্বর যা-ই হোক না কেন এবং যেখানেই সমাবেশ হোক এ বিষয় নিয়ে ঢাকাবাসী এবং সারাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা বিএনপির গণসমাবেশে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিতি কমিয়ে দিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপির সমাবেশ সোহরাওয়ার্দীতে রাখার পক্ষপাতী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু বিএনপি এখনো জোরালোভাবে দাবি করছে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে তারা। এমন বাস্তবতায় সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শঙ্কাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রশাসনের পাশাপাশি ৮ ডিসেম্বর থেকেই রাজধানীর প্রতিটি ইউনিট ও ওয়ার্ডে সক্রিয় থাকবেন তারা। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের আয়োজনও করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপিকে সমাবেশ করতে হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করতে হবে। না করতে চাইলে নাই। নয়াপল্টনে তারা অনুমতি পাবে না। আর না পেলে সমাবেশ করতে পারবে না এটাই তো স্বাভাবিক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দায়িত্বশীল ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না এখন পর্যন্ত তা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আগের দিন রাতে বা সন্ধ্যায় কঠিন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে নয়াপল্টনে অনুমতি দিয়ে দেওয়ার বিষয়েও সরকারের ভেতরে কিছু আলোচনা আছে। এ ক্ষেত্রে অপ্রস্তুত বিএনপিকে শেষ মুহূর্তে নয়াপল্টনে সুযোগ দিলেও তারা বড় কিছু করতে পারবে না। এতে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ও থাকল। আবার অপ্রস্তুতও করা যাবে কি না সেটাই তাদের ভাবনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আজ রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির নবম গণসমাবেশ। ১২ অক্টোবর থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি। যা ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা দাবিতে এ গণসমাবেশ করছে। এতে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি দাবি আদায়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, অতীতে নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির সমাবেশ হয়েছে, প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। তাই আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশও নয়াপল্টনেই হবে। সরকার মূলত অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমরা সরকারের সেই ফাঁদে পা দেব না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে মিছিলের নগরী, জনতার শহর। এই সরকারের পক্ষে সমাবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে না।
এসএন