সর্বজনীন পেনশন হতে হবে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রর্বতনের উদ্যোগ নিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এতে করে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে সমাজের বয়স্কশ্রেণির নাগরিকদের জন্য খুবই ভালো একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রী জরুরিভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে অর্থবিভাগকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। সব শ্রেণির বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।
তবে পেনশন প্রবর্তনের আইনগুলো খুব সহজ সাবলীল হওয়া উচিত। পেনশন প্রথা যেন কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ না হয়ে যায়। পলিসিগুলো যেন জনদুর্ভোগের কারণ না হয়; বরং জনকল্যাণে আইন করা উচিত। সেদিকে আইনপ্রণয়ন সংস্থা এবং সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। কোনো কারণে ব্যক্তির পক্ষে মাসিক কিস্তি দেওয়া না গেলে সে ক্ষত্রেও যেন একটি সিস্টেম করে দেওয়া হয়, যাতে করে পরবর্তী সময়ে সেটি পরিশোধ করা সম্ভব হয়।
অনেক বয়স্ক নাগরিক আছেন, যারা নিয়মগুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানবেন না অথবা বুঝবেন না। তাদের দিকটিও খেয়ালে রেখে নিয়ম-কানুন করা দরকার। আমাদের দেশের অনেক মানুষই এখনো এসব বিষয় সম্পর্কে অসচেতন। সমাজের একটি শ্রেণির হয়তো ধারণাই নেই এ সম্পর্কে। কাজেই একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নে বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখতে হবে। অর্থাৎ জনগণের জন্য পলিসি গ্রহণ করার ব্যবস্থাটি সহজ করে দিতে হবে।
পেনশন প্রথার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত–বৃদ্ধ বয়সে কর্মরত জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্যসীমার উপরে রাখা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করা। তাদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা। সেই সঙ্গে জনকল্যাণ নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একীভূত করে সেটিকে বিনিয়োগে রূপান্তর করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাঙ্গা করা। সে ক্ষেত্রে অবদান রাখার মাধ্যমে মূলধন সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা।
সে ক্ষত্রে বলা হয়েছে, দেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি নাগরিকদের যে কেউ প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাঁদা হিসেবে জমা দিয়ে এই পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে চাঁদা প্রদানের ফি অধিক করা উচিত নয়। সর্বনিম্ন মাসিক ফির পরিমাণ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এই সুবিধা পেতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর ধরে মাসিক ফি চালিয়ে নিতে হবে। ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পর পেনশন হিসেবে এককালীন অর্থ পাওয়াসহ প্রত্যেক নাগরিক তার নিজের কন্ট্রিবিউশন অনুযায়ী আজীবন মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন। আর সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির পর কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা সুবিধা পাবেন।
যেহেতু এটি একটি জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম, যা সরকার গ্রহণ করতে যাচ্ছে। কাজেই সরকারের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদেরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের দরকার আছে বলে আমি মনে করি। কোনো দুর্নীতি যেন না হয়, অর্থ যেন ভিন্নখাতে প্রবাহিত না হয় এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে বয়স্কশ্রেণির স্বার্থ যেন রক্ষা করা সম্ভব হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের অনেক প্রকল্প এবং পলিসি নানা কারণেই সমালোচিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় তেমনটি হবে না–এমনটা মনে করতে চাই। সেক্ষেত্রে বিচার, বিশ্লেষণ এবং গভীর পর্যালোচনা করার দরকার আছে। সর্বজনীন এই প্রক্রিয়াটিকে এমনভাবে পরিচালনা করার দরকার–যেন মূলধন সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা প্রকৃতপক্ষেই সম্ভব হয়।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
এসএ/