গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ: পাঁচ জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর

বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশের পাঁচটি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে অন্তত ১৫টি রেস্তোরাঁ ও শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর এবং বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের শো-রুম ও রেস্টুরেন্টগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা করে।
সিলেট:
সিলেট নগরীতে সোমবার বিকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল কেএফসি ও বাটার শো-রুমে হামলা চালায়। মিছিলকারীরা কেএফসির ভেতরে থাকা কোমল পানীয়গুলো ফেলে দেয় এবং লাঠি দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। পাশের বাটা শো-রুমেও হামলা করে তাদের গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া হবে না।
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক জানান, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে।’’
কক্সবাজার:
কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় পাঁচটি রেস্টুরেন্টে হামলা হয়। বিক্ষোভকারীরা কেএফসি, পিৎজা হাট, কাঁচা লংকা এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে হামলা করে। পুলিশ জানায়, মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাইনবোর্ড নামানোর জন্য বললে, পরিস্থিতি শান্ত রাখা যেত। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির কারণে ভাঙচুর ঘটে। এতে কয়েকজন পর্যটক আহত হন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, “পুলিশ মিছিলের আগে-পিছে ছিল। তবে, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ ইসরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে কিছু রেস্টুরেন্টে ঢিল ছোড়ে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে।”
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল জানান, “আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি সবসময় সংহতি জানাই। কিন্তু কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি রেস্টুরেন্টে হামলা করেছে, যা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।”
চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে কেএফসির দুটি শাখার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়, পাশাপাশি জিইসি মোড়ে কোকাকোলার সাইনবোর্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিছিল থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয় এবং রেস্তোরাঁগুলোতে সামান্য ক্ষতি হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এসব ক্ষতি রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় কোন বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বলেন, “ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে করা মিছিল থেকে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ ছিল।” কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, “চেরাগী পাহাড় মোড়ে কেএফসির সাইনবোর্ডে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি।”
গাজীপুর:
গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় বাটা শো-রুমের বাইরের বিলবোর্ড ও ব্যানার ভাঙচুর করা হয়। তবে, শো-রুমে কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের দাবি জানায়, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নূর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন বলেন, "বিক্ষোভকারীরা বাটা শো-রুমের বাইরের ব্যানার ভাঙচুর করেছে, তবে শো-রুমের ভেতরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
বগুড়া:
বগুড়ায় বিক্ষোভকারীরা বাটা শো-রুমে হামলা করে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাঙচুর করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তারা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। পুলিশ জানায়, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে শহরে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, “মিছিলের সামনে ও পিছনে পুলিশ ছিল। মিছিল থেকে কে বা কারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে তা বোঝা যায়নি। তাতে বাটার দোকানের অল্প কিছু ক্ষতি হয়েছে।”
বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দেওয়া হয়, “ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ” এবং “ইসরায়েল বয়কট বয়কট”। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং ইসলামী সংগঠনগুলো এই প্রতিবাদে অংশ নেয়।
