ঝিন্টির শুভ্র আলোয়
সাদা ঝিন্টি প্রথম দেখি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। দেখে ভেবেছিলাম ভিনদেশি কোনো শীতের ফুল। অসংখ্য সাদা ফুল শুভ্র আভা ছড়িয়ে আলোকিত করে রেখেছে গোটা প্রাঙ্গন। পরে বইপত্র দেখে সঠিক নাম জানতে পারি। প্রচলিত অন্যনাম ঝাঁটি, জান্তি, ঝুটি বা বন-পাথালি। ইংরেজি নাম Philippine Violet, Crested Philippine Violet. তবে মজার ব্যাপার হলো–আমার প্রায় অচেনা এই ফুল দেশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। একসময় ঢাকায়ও অঢেল ছিল। জন্মাত প্রাকৃতিকভাবে।
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল এবং ঢাকার কোথাও কোথাও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের ফুল অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য। বলধা গার্ডেনের সিবিলিতে নীলচে-বেগুনি এবং বোটানিক গার্ডেনে হলুদ রঙের ফুল দেখা যায়। এদের লাল রঙের ফুলের নাম ‘কুরুবক’।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন–
‘কর্ণমূলে কুন্দকলি, করুবক মাথে।’ অন্যত্র আছে
‘কুরুবকের পরত চূড়া
কালো কেশের মাঝে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুটেছে সাদা ঝিন্টি ছবি: মোকারম হোসেন
খাড়া, কাঁটাহীন, প্রায় ১ মিটার উঁচু উপগুল্ম, শাখা রোমশ। গাছ ঝোপাল, অনেকগুলো ডালপালা, কাণ্ড কৌণিক, রোমশ ও সবুজ। পাতা ডিম্ব-লম্বাকৃতি, অখণ্ড, ৪ থেকে ৭ সেন্টিমিটার লম্বা, উপরে সবুজ, নিচে হালকা রোমশ, বিন্যাস বিপ্রতীপ। পাতা সরল, প্রতিমুখ, সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ১ থেকে আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত থেকে বল্লমাকৃতির ও অখণ্ড। স্পাইক যৌগিক, ঘন, ফুল ৪ থেকে ৭ সেন্টিমিটার লম্বা। মঞ্জরিপত্র অনুপস্থিত, মঞ্জরিপত্রিকা ৫ মিমি লম্বা, কিনারা ঈষৎ দাঁতানো। বৃতি গভীরভাবে ৪-খণ্ডিত, পেছনের বৃত্যাংশ বৃহত্তর এবং প্রায় দেড় সেন্টিমিটার, ডিম্বাকৃতি-বল্লমাকার এবং স্পষ্টভাবে জালিকাকার। ফুল একক বা গুচ্ছবদ্ধ। দলনল ফ্যানেল আকৃতির, দলমণ্ডল প্রায় ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, বাহিরে গ্রন্থিল-রোমশ, ধুতুরাকৃতি এবং ৫ লতিযুক্ত। পুংকেশর চারটি, অসমান, অবিকশিত পুংকেশরগুলো ৫ মিলিমিটার লম্বা হতে পারে। পরাগধানী দীর্ঘায়ত ও ২ কোষবিশিষ্ট। রেশমি-বাদামি রঙের বীজগুলো গোলাকার।
নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল ফোটার মৌসুম। আমাদের দেশে সাধারণত সাদা লালচে ও বেগুনি রঙের ফুল দেখা যায়। ভারত-পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সাদা ঝিন্টির (Barleria Cristata) বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়।
গাছের বিভিন্ন অংশ সর্পদংশনের প্রতিষেধক, তা ছাড়া কাশি ও শরীরের ফোলা কমাতে পাতার নির্যাস ব্যবহার্য। ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এ গাছের মূল ও পাতার নির্যাস রক্তস্বল্পতা, কাশি এবং প্রদাহ রোগে কাজে লাগায়। উদ্যান সজ্জায় এদের বর্ণবৈচিত্র কাজে লাগানো যেতে পারে। সাধারণত বেড়ার ধারেই এরা মানানসই।
লেখক: প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক তরুপল্লব
এসএ/