বালিয়াড়ির সাগরলতা
সোনাদিয়ায় যাবার পর সেখানকার পরিবেশকর্মীরা জানালেন উপকূলের বালিয়াড়িতে বালির ঢিবি বানাতে তারা স্থানীয় সাগরলতা ও সাগরনিশিন্দা ব্যবহার করছেন।
গাছের নাম দুটো অচেনা মনে হলেও ওদের কর্মকাণ্ড দেখতে সৈকতের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা সেখানে অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করছেন। সাগরলতাটির বহুল প্রচলিত নাম ছাগলখুরী। সম্ভবত পাতার কারণেই এমন নামকরণ। কারণ পাতার আগা ছাগলের খুরের মতো দুই ভাগে বিভক্ত। এ লতা প্রথম দেখি বেশ কয়েক বছর আগে, কুয়াকাটা থেকে পাতরার বনে যাবার পথে সাগরপাড়ে ঝোপঝাড়ের ভেতর।
সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চকোরিয়া থেকে মহেশখালী হয়ে সোনাদিয়া ও কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত। এসব স্থানে এরা এক ধরনের প্রাকৃতিক বেষ্টনির কাজ করে। বিশেষ করে মাটির ক্ষয়রোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কিন্তু অসচেনতার কারণে স্থানীয় অনেকেই এগুলো সংরক্ষণ না করে বরং কেটেছেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ফুলের রং গাঢ় বেগুনি, ফোটে পর্যায়ক্রমে, প্রায় সারাবছর।
ছাগলখুরী লতার (Ipomoea pes-caprae) ইংরেজি নাম বিচ মর্নিং গ্লোরি ও রেলরোড ভাইন। বহুবর্ষজীবী চিরসবুজ লতা। সাধারণত বালুতটে গড়ানোই স্বভাব। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নোনাবালি ও নোনা বাতাস বেশি পছন্দ। সর্বশেষ ১৮১৮ সালে বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন গাছটির প্রজাতি শনাক্তিসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ সুসম্পন্ন করেন।
লতা দ্রুত বর্ধনশীল ও লম্বাটে হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাতা একক, পুরু, মসৃণ ও দেড় মিমি লম্বা। ফুল সাধারণত একক, ফোটে পাতার কক্ষে, বেগুনি রং, ফানেল আকৃতির এবং ৩ থেকে ১৬ সেমি দীর্ঘ। গাছ চমৎকার ওষুধিগুণ সম্পন্ন। পাতা ও শিকড় দুর্বলতা কাটাতে, আথ্রাইটিসে, বাত ব্যাথায় এবং কোথাও কোথাও ডায়াবেটিসের প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহার্য। আমাদের দেশে এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি ডোলকলমি, জলকলমি ও মর্নিংগ্লোরি। সারা পৃথিবীতে এই (আইপোমিয়া) গণে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছ দেখা যায়।
লেখক: প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক তরুপল্লব
এসএন