অর্থ পাচার রোধে “মার্কেট ফর ইনভেস্টমেন্ট” জরুরি
অর্থ পাচার শুধু যে বাংলাদেশ থেকে হচ্ছে তা নয়। আন্ডার ডেভেলপ কান্ট্রি যেগুলি আছে যেমন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান শ্রীলংকাসহ অনেক দেশ থেকেই অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোন দেশ থেকে বেশি হচ্ছে কোন দেশ থেকে কম অর্থ পাচার হচ্ছে। কিন্তু অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে এটি খুব দুক্ষজনক ব্যাপার। এখন অর্থ পাচার বলতে আমরা কি বুঝি? কেউ অর্থ বেআইনিভাবে নিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটি হয় ট্রাঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে। একশ্রেণীর লোক যদি সহজে ধনী হয়ে যায়, তারা সেই অর্থ কি করবে? এরা নিরাপদে দেশের বাইরে সেটি কনজিউম করতে চায় এবং বেশিরভাগই তাই করছে। এবং এরা ঠিকমতো ট্যাক্স দেয় না। আমাদের দেশে আইন করা আছে যে, ক্যাপিটাল একাউন্ট কর্ভারটেবল নাহ। কেউ এখান থেকে কোটি টাকা নিয়ে যাবে, এটি not approved by Bangladesh bank. কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এটি সহজ করে দিতো তাহলে যাদের টাকা আছে, তাদের সন্তানেরা বিদেশে থাকে,তারা অন্যায়ভাবে না নিয়ে একটি সহজ পন্থা অবলম্বন করতে পারতো। সেটি না থাকায় এরা তখন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। এক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ব্যাংকের উচিত হবে, এরা যদি প্রপার ডকুমেন্টস দেখাতে পারে, তাহলে বিষয়টি সহজ করে দেওয়া। they should tell, u can take your money outside the country.আমি যতদূর জানি, চিকিৎসাক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, ট্রাভেলক্ষেত্রে শুধু টাকা নেওয়া যায়। ইনভেস্টমেন্ট ক্ষেত্রে ইদানিং অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিচ্ছে। কথা হলো, কোন আইন দিয়ে এই অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব বলে মনে হয় না। তাহলে তো কোন দেশ থেকে টাকা পাচার হতো না।
আমাদের দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। টাকাগুলি বাইরে নিয়ে গিয়ে এরা কি করছে? এরা হয়তো রিয়েলস্টেট ক্রয় করছে, অথবা স্টক মার্কেট অথবা গোল্ড মার্কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে।এটি আমাদের দেশেও হতে পারতো। কিন্তু সেটি হচ্ছে না কেন?সেটি দেখা দরকার। আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের দেশের ট্যাক্স রেট কম হতে হবে। বিদেশে এটি অনেক কম । কোন কোন ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। ফলে অসংখ্য পথ আছে যেগুলি ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা সম্ভব এবং হচ্ছেও তাই। আমাদের যেটি করতে হবে গ্লোবাল ইকোনমির সাথে টাই আপ করতে হবে। আমাদের এক মিনিস্টার সেদিন বলছেন যে, তারা আশিয়া্নদের সাথে ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হতে চায়।
আমার কথা হচ্ছে এত পরে কেন কথাটি আসলো? এসোসিয়েট হওয়ার ব্যাপারটি প্রায় বিশ বছর আগেই হওয়ার কথা ছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে অনেকেই চুক্তি করেছে, আশিয়ানদের সাথেও করেছে শুধু আমরাই পারি নাই। আমাদের অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে এটি নিয়ে আমরা খুব হতাশ। কিন্তু আমরা একটি মার্কেট তৈরি করতে পারছি না। কেন দেশের সম্পদ দেশেই ব্যবহারের জন্য আমরা ক্ষেত্র সৃস্টি করতে পারি নাই? সেক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানিগুলি এগিয়ে আসতেই পারে।
আয় সবসময়ই প্রবাহমান এবং এটিকে দেয়াল দিয়ে কেউ আটকে রাখতে পারে না। আয় এক দেশ থেকে আরেক দেশে ফ্লো করবেই। এখন আমাদের অর্থনীতিতে সেটি থাকবে কি থাকবে না সেটি নির্ভর করছে আমাদের ইন্টারনাল পলিসির উপর। আমাদের ইকোনমি কতটুকু উদীয়মান, আমাদের ইকোনমি কতটুকু নিরাপত্তা দিচ্ছে দেখা দরকার। বিদেশীরা টাকা ইনভেস্ট করে এখান থেকে টাকা নিয়ে যেতে পারে। এখন অর্থ ইনভেস্টরদের হাতে নেই, চলে গেছে স্মাগলারদের হাতে। সেটি ফিরিয়ে আনতে হলে দেশের অভ্যন্তরেই লাভজনক ক্ষেত্র তৈরির বিকল্প নেই। মনিটরিং আগে যেটুকুও ছিল সেটি এখন অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে। আগে যে চুক্তিগুলি হয়েছিল সেগুলিও কার্যকরী হচ্ছে না। আমাদের ভিন্ন পথ অবলম্বন ছাড়া উপায় নেই।
আরেকটি বিষয় এখানে যুক্ত করতে চাই।সেটি হলো বেশ কয়েকটি দেশ কিন্তু এয়ারপোর্টে ড্রাগ জাতীয় দ্রব্য ছাড়া অর্থ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না এসব ধরে না। বস্তাবন্দী ডলার নিয়ে গেলেও এরা ধরবে না। ওরা ফ্রি করে রেখেছে। এখানে বোর্ডিং পাস করার সময় এরা প্রশ্ন করে, কত ডলার নিয়ে যাচ্ছেন? আমাদের দেশে এরা এই প্রশ্ন কেন করবে? এখনো আমরা ছোট চিন্তাতে আছি যে, বাংলাদেশ দরিদ্র, দেশের অর্থ পাচার রোধে আইন করতে হবে, মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমদের অর্থ দেশের পাচার রোধ করতে হলে দেশের ভিতরেই বড় ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে, বেশি পরিমাণে ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে। মনিটরিং অথবা শুধু আইন দিয়ে এই রোধ করা সম্ভব নাহ।
আসল ব্যাপার আমি যেটি মনে করি, মার্কেট ফর ইনভেস্টমেন্ট। রিয়েলস্টেট ,স্টক মার্কেট, গোল্ড মার্কেট ইত্যাদিকে যদি ভাল করে তুলে ধরা যায়, এই বাজারগুলি তৈরি করা গেলে দেশের টাকা তখন বাইরে যাওয়ার দরকার হবে না। এই পাচারগুলি হচ্ছে দরিদ্র দেশ থেকে। কাজেই একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমি বলতে পারি, টাকা পাচার রোধে আইন, মনিটরিং এসবের চেয়েও কার্যকরী পদক্ষেপ হবে দেশে টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করা।সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়