শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বিচক্ষণতার প্রতীক বঙ্গমাতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কণ্টকাকীর্ণ পথে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান ও গুরুত্ব নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়ার কথা তা হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন অপরিসীম ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বিচক্ষণতার প্রতীক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন বেগম মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জাতির পিতার পাশে থেকে দেশ ও জাতির মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। তার কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন একটি সংগ্রামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে জীবন কোটি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সঙ্গে দ্বিধাহীনভাবে যুক্ত হয়েছিল ত্যাগ ও নিপীড়ন মোকাবিলা করবার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায়।

বেগম মুজিব সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন-’আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। আমাকে যখন পিন্ডির ফৌজ বা পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার উপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙে পড়েনি। আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন। প্রথমটি হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার স্ত্রী আকৈশোর গৃহিণী।’

ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু যে পরিবেশ ও পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছাও সেই একই পরিবেশে বড় হয়েছেন, এমনকি একই পরিবারে। স্বাভাবিকভাবেই মুজিবের আদর্শ, তার সহজাত মানসিকতা, সাহস ও আত্মবিশ্বাসী সত্ত্বা দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। সেই কিশোরী বয়স থেকে সকল ক্ষেত্রে স্বামী মুজিবকে সমর্থন করার মধ্যে এটি লক্ষ করা যায়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে তিনি প্রশ্নহীনভাবে সমর্থন দিয়েছেন, মনোবল ও সাহস জুগিয়েছেন, অপরিসীম প্রেরণা জুগিয়েছেন। এর সবই তিনি করে গেছেন একান্ত নিভৃতে থেকে।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ বংশের নাম তখন ওই অঞ্চলে বেশ পরিচিত। স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান তার চাচাতো ভাই ছিলেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছার পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতামহ শেখ আব্দুল হামিদ ছিলেন চাচাতো ভাই। শেখ ফজিলাতুন্নেছার ডাকনাম ছিল রেণু। তার পিতা শেখ জহুরুল হক ও মাতা হোসনে আরা বেগম। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিতা-মাতা উভয়কেই হারান। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি ভাবী-শাশুড়ি এবং বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুনের কাছে সন্তানের মতো করে বড় হতে থাকেন।

পিতামহের ইচ্ছায় ১৯৩৮ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। যদিও তাদের সংসারজীবন শুরু হয়েছিল অনেক পরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কোলকাতায় পড়াশোনা করতেন। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় এবং দুর্ভিক্ষের সময় তার স্বামী যখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করেছেন, তার সঙ্গে একই রকম মনোভাব নিয়ে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে গেছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। এমনকি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে অপরিসীম সহযোগিতায় বেগম মুজিবকে একান্তভাবে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে রাস্তায় নেমে লিফলেট বিতরণ করেছেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন- “বঙ্গবন্ধু জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তার অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনা করা-প্রতিটি কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন নেপথ্যে থেকে।

তার স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল, আন্দোলন চলাকালীন সময়ের প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। আবার আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সভা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে চলাকালীন সময়ে তিনি নিজের হাতে রান্নাবান্না করতেন এবং খাদ্য পরিবেশন করতেন। এই সংগঠনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করার কাজে তার অবদান অপরিসীম। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চক্ষু বাঁচিয়ে সংগঠনকে সংগঠিত করতেন, ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেন।’

বেগম ফজিলাতুন্নেছার পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম তার সমস্ত সম্পত্তি বেগম ফজিলাতুন্নেছা ও তার আরেক বোনকে দান করে গিয়েছিলেন। দাদার দিয়ে যাওয়া সম্পত্তি থেকে যে অর্থ আসত, তা তিনি জমিয়ে রাখতেন। নিজের সাধ-আহ্লাদ পুরণে তা খরচ না করে স্বামীর হাতে তুলে দিতেন। রাজনীতি করতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা তিনি বুঝতেন এবং স্বামীর পথচলাকে সহজ করতেই ছিল তার এই প্রয়াস।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে খাজা নাজিমুদ্দিনও একই ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে এদেশের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করায় ’৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। কারাগারে অন্তরীণ তরুণ শেখ মুজিবকে নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ায় আবারও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫০ সালে কারারুদ্ধ হয়ে টানা দু’বছর কারাগারে থাকতে হয়। ১৯৫৮ সালে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে ১৪ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করলে ১৯৬৯ এর ২১ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে আনে এবং রেসকোর্স ময়দানে এক ছাত্র-গণসম্বর্ধনায় তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দীর্ঘ ১৪ বছর বঙ্গবন্ধুকে কারাগারেই কাটাতে হয়েছে। দিনের পর দিন বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকা অবস্থায় বেগম মুজিব শত সংকট মোকাবিলা করে সংসার সামলে ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করেছেন, তাদেরকে পড়াশোনা করিয়েছেন। কোনোদিন স্বামীর প্রতি এতটুকু অভিযোগ করা তো দূরে থাক, সবসময় আপসহীন থেকে তার রাজনৈতিক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যেতে নিরন্তর উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন।

মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা লিখেছেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি, আমার বাবা কারাবন্দি। মা তার মামলার জন্য উকিলদের সঙ্গে কথা বলছেন, রাজবন্দী স্বামীর জন্য রান্না করে নিয়ে যাচ্ছেন, গ্রামের শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজনের খবরাখবর রাখছেন। আবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, যারা বন্দী তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে টাকাও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারাগারে দেখা করতে গিয়ে স্বামীর কাছে বাইরের সব খবর দিচ্ছেন এবং তার কথাও শুনে আসছেন। কাউকে জানানোর থাকলে ডেকে জানিয়েও দিচ্ছেন। এরপর আছে তার ঘর-সংসার। এর মধ্যে ছেলেমেয়েদের আবদার, লেখাপড়া, অসুস্থতা, আনন্দ-বেদনা সবকিছুর প্রতিও লক্ষ রাখতে হয়। এতকিছুর পরও তার নিজের জন্য সময় খুঁজে নিয়ে তিনি নামাজ পড়ছেন, গল্পের বই পড়ছেন, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করছেন।

কী ভীষণ দায়ভার বহন করছেন! ধীর, স্থির এবং প্রচণ্ডরকম সহ্যশক্তি তাঁর মধ্যে ছিল। বিপদে, দুঃখ বেদনায় কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বরং সেখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছেন-এটাই ছিল তার চরিত্রের দৃঢ়তা, তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।’

কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন, ‘মুজিবের কথা বলতে গেলে মুজিবের স্ত্রীর কথা বলতে হয় এত ধৈর্যশীল, এত শান্ত, এত নিষ্ঠাবতী মহিলা খুব কমই দেখা যায়। মুজিবের বছরের বারো মাসের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জেলখানায়। যখনি শুনেছি মুজিবকে ধরে নিয়ে গেছে, ছুটে গিয়ে দেখেছি, মুজিবের স্ত্রী অবিচল মুখে কাপড়, বিছানা-বালিশ গুছিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে. বলছে, আপনার ভাইতো জেলে গেছে।’

২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগের দিন ২২ মার্চ রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধুকে চিন্তাক্লিষ্ট দেখে বেগম মুজিব জানতে চেয়েছিলেন, ‘পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে কি কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘না, নিতে পারিনি। আমি পতাকা ওড়াতে চাই। একটাই ভয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখনো ঢাকায়। পাকিস্তানিরা বলবে, আলোচনা চলা অবস্থাতেই শেখ মুজিব নতুন পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এই অজুহাত তুলেই তারা নিরস্ত্র বাঙালির উপর সামরিক হামলা চালাবে।’

এ অবস্থায় বেগম মুজিব পরামর্শ দিয়েছিলেন- ‘আপনি ছাত্র নেতাদের বলুন, আপনার হাতে পতাকা তুলে দিতে। আপনি সেই পতাকা বত্রিশ নম্বরে ওড়ান। কথা উঠলে আপনি বলতে পারবেন, আপনি ছাত্রজনতার দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধু আর কোনো কথা না বলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেন, পরদিন ২৩ মার্চ তিনি ৩২ নম্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়াবেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা সেই ঘোষণায় উৎফুল্ল চিত্তে জয় বাংলা শ্লোগানে মুখর করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে এবং র‌্যালি করে সেই পতাকা ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে হস্তান্তর করেন। সেদিন সচিবালয় থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের সমস্ত সরকারি বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট ভবনেও এদিন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাই কমিশন ও সোভিয়েত কনসুলেটে সকাল থেকেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল। চীন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল নিজেদের পতাকার পাশে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ালেও জনদাবির মুখে তা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এদিন সাধারণ ছুটি পালিত হয়।

এর আগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আগে একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল এবং দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পক্ষের নানামুখি প্রস্তাব ও পরামর্শে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুকে তিনি কারও পরামর্শ না শুনে নিজে যা সঠিক মনে করেন, তাই বলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেখানে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন। এমনই ধী-শক্তিসম্পন্ন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বস্তুত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনের কারিগর। তার ব্যক্তিত্বের প্রখরতা ও চিন্তার দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে বাঙালির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে পথনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

তার সুমহান ব্যক্তিত্ব ও অপরিসীম ত্যাগের সাথে পরিচয় ঘটানোর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশমাতৃকার প্রতি নির্মোহ চিত্তে আত্মনিবেদনের তাড়নাকে জাগ্রত করতে পারি। মহীয়সী এই মমতাময়ী জননীর জন্মদিনে আমার কৃতজ্ঞ চিত্তের অশেষ শ্রদ্ধা।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Header Ad
Header Ad

সেনাবাহিনীর অভিযানে ৩৮৩ ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ গ্রেফতার

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, কিশোর গ্যাং সদস্য এবং মাদক কারবারিসহ মোট ৩৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত ৬ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীন ইউনিট অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এসব অভিযান পরিচালনা করে।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৩টি পিস্তল, একটি রিভলবার, ২টি শুটার গান, গোলাবারুদ, ককটেল বোমা, মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক, এনআইডি, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

আইএসপিআর জানায়, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি কার্যক্রম শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রম ও অগ্নি নির্বাপনে অংশ নেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আইএসপিআর সাধারণ জনগণকে যে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

Header Ad
Header Ad

‘যমুনা রেল সেতু’ উদ্বোধন  ১৮ মার্চ, প্রধান অতিথি রেলপথ সচিব

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর উপর নির্মিত যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের একমাত্র দীর্ঘতম নবনির্মিত ‘যমুনা রেল সেতু’ ১৮ মার্চ উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে রেলপথ বিভাগ।

যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি উপস্থিত থাকবেন- বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত H.E. MR. SAIDA SHINICHI Ges MR. ITO TERUYUKI, DIRECTOR GENERAL SOUTH ASIA DEPARTMENT, JICA প্রমুখ।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন- যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখবেন- মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ে (সভাপতি) মো: আফজাল হোসেন।

শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকালে যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান ঢাকা প্রকাশকে এ বিষয়টি জানান।

মাসউদুর রহমান বলেন- আগামী ১৮ মার্চ সকাল ১০টায় টাঙ্গাইলের যমুনা রেল সেতুর পূর্ব প্রান্ত ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন প্রাঙ্গণে নবনির্মিত যমুনা রেল সেতুর শুভ উদ্বোধনের আয়োজন করা হবে।

এছাড়াও কর্মসূচির মধ্যে যমুনা রেল সেতু পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে বেলা ১১ টা ২০ মিনিটে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম প্রান্তে সয়দাবাদ রেল স্টেশন পর্যন্ত উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা যমুনা রেল সেতু পারাপার হবে এবং ১১ টা ৪০ মিনিটে সয়দাবাদ রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। পরে বেলা ১২ টায় ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন পূর্ব প্রান্তে ফেরত আসবে।

তিনি আরও বলেন- উদ্ধোধনের একদিন পর অর্থাৎ ১৯ মার্চ থেকে বাড়তি ভাড়া (রেলের ভাষায় পন্টেজ চার্জ) গুণতে হবে যাত্রীদের।  যা উদ্বোধনের একদিন পর ১৯ মার্চ থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। ৪.৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ সেতুটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে ঢাকার সাথে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করবে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

বিশ্বে প্রথমবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলার

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলারে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) স্বর্ণের দাম ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে এই রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছায়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৩ বার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি ও ইউরোপের ওপর নতুন শুল্ক হুমকির কারণে বিশ্ববাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ওয়াইন, শ্যাম্পেনসহ অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের ওপর দুইশ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

বৈশ্বিক বাণিজ্যে এই অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হুইস্কির ওপর ইউরোপের শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, যদি ইউরোপের শুল্ক অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা সব ধরনের ওয়াইন, শ্যাম্পেনসহ অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের ওপর দুইশ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

এর আগে ট্রাম্প সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে বলে বুধবার (১২ মার্চ) জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সেনাবাহিনীর অভিযানে ৩৮৩ ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ গ্রেফতার
‘যমুনা রেল সেতু’ উদ্বোধন  ১৮ মার্চ, প্রধান অতিথি রেলপথ সচিব
বিশ্বে প্রথমবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলার
আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান, কারণ আমাদের সমুদ্র আছে : প্রধান উপদেষ্টা
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়: জাতিসংঘ মহাসচিব
আওয়ামী লীগ নেত্রী রূপালি গ্রেফতার
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পেতে আধা ঘণ্টায় ২০ লাখ হিট
দুই বছরের কন্যাকে হারালেন আফগান ক্রিকেটার হজরতউল্লাহ জাজাই
রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
কুমিল্লায় ৩ কোটি টাকার ভারতীয় আতশবাজি জব্দ
সুন্দরবনের গহীন থেকে বৃদ্ধা নারী উদ্ধার
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত
গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো সাত লাশ উদ্ধার
জাতিসংঘ মহাসচিবকে নিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছেছেন ড. ইউনূস
গালি দেয়া সেই উপস্থাপিকার চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান হাসনাতের
প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতকারীরা আশকারা পাচ্ছে: রিজভী
৬০তম জন্মদিনে নতুন প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন আমির খান
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাতিসংঘ: গুতেরেস
আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ভয়াবহ আগুন, ডানা দিয়ে নামলেন যাত্রীরা
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সীমান্তে ৯ লাখ টাকার মাদক ও চোরাচালানি মালামাল জব্দ