মৌলভীবাজারের জুড়ীতে মেয়েকে সাঁতার শেখাতে গিয়ে পুকুরে ডুবে একই সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন এক বাবা ও তাঁর মেয়ে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে এ হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) এবং তাঁর মেয়ে হালিমা মোহাম্মদ (১৮), যিনি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা যায়, ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন হালিমা। বাবা-মেয়ের মধ্যে ছিল গভীর স্নেহের সম্পর্ক। পুকুরে নেমে মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা। ব্যবহার করছিলেন একটি প্লাস্টিকের টিউব। একপর্যায়ে হালিমার হাত ফসকে গেলে তিনি পানিতে ডুবে যেতে থাকেন। মেয়েকে বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দেন বাবুল আহমদ। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি—বাঁচানো তো দূরের কথা, প্রাণ গেল দুজনেরই।
স্থানীয়রা জানায়, টের পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুজনকে উদ্ধার করে। পরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুজনই মারা যান। ঘটনার পর হামিদপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাবুল আহমদের বাসা ঢাকায়। স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে তিনি সেখানে বসবাস করতেন। চার সন্তানই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। গ্রামের বাড়ির কাছে মানিকসিংহ এলাকায় তাঁর বাব ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সবাই কয়েক দিন আগে গ্রামে বেড়াতে আসেন। দ্বিতীয় মেয়ে হালিমার আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
সোমবার বিকেলে বাবার সঙ্গে পুকুরে নামেন হালিমা। টিউব ভরসা করে সাঁতার শেখার একপর্যায়ে দুর্ঘটনা ঘটে। মেয়েকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও প্রাণ হারান বাবুল। সন্ধ্যার পর বাবুল আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে বাবা-মেয়ের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আলাদা দুটি কক্ষে রাখা হয়েছে তাঁদের নিথর দেহ। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কারও চোখেই নেই শান্তি।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও বিষাদের ছায়া। বাবার কোলে মেয়ের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ যেন বলে দেয়—ভালোবাসার শেষ পরিণতি কতটা করুণ হতে পারে।