কালো টাকা সাদা
শ্যাম রাখি না কুল রাখি
প্রতিবছরই বাজেট প্রণয়নের সময় সরকার নানা ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন প্রশ্ন আছে, জাতীয় রাজস্ববোর্ডও সেটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে মানুষের জন্য। আমাদের দেশের রাজস্ব আদায়র প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি যত বাড়বে তত বেশি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এ বছরই আমাদের নতুন করে বেশ কিছু কর অঞ্চল তৈরি হবে। এতে করে যেমন একদিকে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হবে একইভাবে দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মজবুত হবে।
সরকার এ বছরও কিছু শর্ত সাপেক্ষে কোম্পানি করের যে হার সেটি হ্রাস করেছে। বিগত কয়েক বছরে কোম্পানি করের হার অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এটির একটি উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, তারা যেন কর প্রদানে উৎসাহিত হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই করের হার বেশি আমাদের চেয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশ সেহেতু যারা বিনিয়োগকারি তাদের করের হার কমানো হলে তারা যেন আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়, সে লক্ষ্যেই কিন্তু করের হার কমানো হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে করের হার কমানো হয়নি, সেটি এমনিতেই কম আছে বলে আমি মনে করি। একজন করদাতার আয়ের পরিমাণ কম হলে তাদের করের হারও আনুপাতিকহারে কমে যাবে। তবে ভ্যাট কিন্তু সবার জন্য একই হারে আছে ।
এ বছর অর্থ আইনে অনকেগুলো পরিবর্তন এসেছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে যে, যে সকল নাগরিক মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে, কিংবা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তারা যদি বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে ডিক্লারেশন দিয়ে তাদের সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনে, তাদের সেই কালো টাকাকে সাদা করতে পারবে সহজ ভাষায়। আমরা মিডিয়াতে প্রায়ই শুনি হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে। এই টাকার একটি বৃহৎ অংশ যেন দেশে ফিরে আসে। এই টাকা বিদেশে থাকলে দুটি সমস্যা হচ্ছে আমাদের। টাকাটা যদি দেশে ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগে বাড়ানো হয়, তাহলে সরকার মনে করছে যে, সেটি আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এদেশে বিনিয়োগ বাড়বে। টাকাটাও দেশে থাকবে। এ ধরণের সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে অনেক মত আছে। আমাদের দেশের সরকার যত বেশি কর আদায় করতে পারবে, ততবেশি আমরা দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো। তবে কর ফাঁকির বিষয়টি যত দ্রুত কমানো যাবে তত ভাল। ব্যাংকিং ট্রানজেকশন ছাড়াও কিন্তু দেশে প্রচুর পরিমাণে ক্যাশ ট্রানজেকশন হয়। আমরা জানি অনেকেই টাকা জমিয়ে রাখে। যে কারণে মনে করা হয় প্রচুর কালো টাকা অনেকের কাছেই জমে গিয়েছে। এটি থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরকে সমস্যামুক্ত রাখতে হলে এর বিকল্প নেই। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরগুলি এমনিতেই নানা ধরণের সমস্যার মধ্যে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অনেক কমে গিয়েছে। এটি সুস্থ অর্থনীতির পথে অন্তরায়। স্টক মার্কেট সাধারণ মানুষের জন্য বিনিয়োগের স্থান। এটি যতবেশি ট্রান্সপারেন্ট হবে ততবেশি ভাল হবে। মানুষ বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। সরকারের তহবিলে অর্থসংস্থান বাড়বে এবং অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে যে সকল মতামত আসছে, কেউ কেউ বিষয়টিকে এভাবেই হয়তো ভাবছেন যে, শ্যাম রাখি না কুল রাখি সেটি নিয়ে বিশ্লেষক পর্যায়ে সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ ও চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ববোর্ড