শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল
বাজেটে অর্থমন্ত্রী যেটি উপস্থাপন করলেন, সেখানে দেখা গেল যে মুদ্রাস্ফীতি ৫.৫%। সে হিসেবে আমরা যদি বরাদ্দ বাড়াই, সেক্ষেত্রে যেটি হওয়া উচিত ছিল এটি আরও বাড়ানো উচিত ছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক খাতে যেটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে যে ঘাটতিটুকু দেখা যাচ্ছে, আমার মনে হয়েছে, মাধ্যমিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে প্রাথমিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল। কারণ প্রাথমিক খাতে যদি আমরা সঠিক বরাদ্দ করতে না পারি, মাধ্যমিক ক্ষেত্রেতো সেই হিসাব নিকাশটাই আসবে। প্রাথমিকের সেই ছাত্রছাত্রীরাই যাবে। বঙ্গবন্ধুর কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে ৬৫% প্রাথমিকে বরাদ্দ করা হতো। মাধ্যমিক ক্ষেত্রে ২০% ব্যয় করা হতো আর উচ্চশিক্ষায় ১৫ শতাংশ ব্যয় করা হতো। এবারে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দটি হলো, গত দুই বছরে কোভিডের কারণে শিক্ষাখাতে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিকে অতিক্রম করা এবং ক্ষতি পুষিয়ে শিক্ষাখাতকে সম্প্রসারণ করা, সেক্ষেত্রে বরাদ্দটি অপ্রতুল বলেই মনে হচ্ছে।
আমি মনে করি, মাননীয় সাংসদরা জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে যে আলোচনা করবেন, সেক্ষেত্রে শিক্ষাখাতকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবেন। সার্বিকভাবে বলা যায়, এবার সরকার যে বাজেটটি দিয়েছে, সেটি আলোচনার সূত্রপাতের জন্য ভালো। আমি আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, কারিগরি শিক্ষার বরাদ্দটি আরও বাড়ানো দরকার। কারণ কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ একেবারেই বাড়ানো হয় নাই। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা যদি না বাড়ানো যায়, তাহলে আমাদের জনসম্পদ রপ্তানিতে অর্থাৎ বিদেশ থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা সেটি কিন্তু আর বাড়াতে পারবো না। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কম শ্রমিক নিয়েও আমরা বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারতাম। সেটির জন্য আমাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। কাজেই আমি মনে করি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরিধি বাড়ানোর দরকার আছে। এটির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার দরকার আছে।
বাজেট নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। সেদিক বিবেচনায় এটি গতানুগতিক বাজেট হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে যদি আরও কিছু বিষয় যদি সংযুক্ত করা যায় তবে সেটি অপেক্ষাকৃত ভাল হবে। আমি আশা করি সংসদে এবং সংসদের বাইরেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে দুর্বলতাগুলি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়