জাতীয় বাজেট কি শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য?
প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে মতবিনিময় করে থাকে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও পৃথকভাবে বাজেটে তাদের প্রত্যাশা নিয়ে সংলাপ আয়োজন করে। এবারও যথারীতি তারা সে আয়োজন করেছে। আবার বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমগুলোও বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকার প্রচার করছে। বিষয়টি দেখে অনেকটাই মনে হতে পারে জাতীয় বাজেট কি শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য? নাকি সমাজের সব স্তরের পেশা, শ্রেণির মানুষেরও বাজেট নিয়ে কোনো ভাবনা আছে?
বাজেট অধিবেশন শুরুর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহল বাজেটে নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে দেনদরবারে শুরু করে দেন। বিশেষ করে আমদানি শুল্কহ্রাস, নগদ ভর্তুকি প্রাপ্তি ও প্রনোদনার হার বাড়াতেই তাদের এ তৎপরতা। তাহলে বাজেট কি শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নাকি দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে। আর এফবিসিসিআইয়ের সভায় অর্থমন্ত্রীও একই সুরে কথা বলেছেন। এনবিআরের আয় হচ্ছে আমদানি শুল্ক, আয়কর, ভ্যাট, মুসক ইত্যাদি। বিদেশ থেকে আমদানিকরা খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল ধরনের ট্যাক্সই ভোক্তাদের ঘাড়েই পড়ে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন তারাই ট্যাক্স ও ভ্যাটের যোগান দিয়ে জাতীয় অর্থনীতি বেগবান রেখেছেন। কথাটি আংশিক সত্য। কারণ যেকোনো পণ্য বা সেবার ঊহফ টংবৎং হিসেবে ভোক্তাদের উৎপাদান, আমদানি, পরিবহন থেকে শুরু করে, ভ্যাট, ট্যাক্স, ব্যাংকের সুদ, রাজনৈতিক দলের চাঁদা, শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছুর খরচের দায় ভার বহন করতে হয়। আর ব্যবসায়ীরা শুধু এ ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করেন এবং এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে আদায়করা করে ভাগ বসান।
দেশে করোনার মহামারি শুরু থেকেই মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশ বেকায়দায়। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসও বলছে, করোনা মহামারিতে অন্তত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি বলছে, আগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন সেটা আরও ৫ শতাংশ বেড়ে ২৫ শতাংশে উঠেছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপের তথ্য মতে, করোনার পরবর্তী সময়ে মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ এখন দরিদ্র। মহামারির কারণে অনেকে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। না হয় কর্তিত বেতনে তাদের চলতে হচ্ছে। অনেকের বেতন কমে গেছে। সঞ্চয় ভেঙে ও ধার-দেনায় সংসার চালালেও নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। এর বাইরে চিকিৎসা ও সংক্রমণরোধে খরচের পরিমাণও বেড়ে গেছে। অনেকে নগরজীবনের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে না পেরে কম খরচের বাসায় উঠেছেন, কিংবা স্থায়ীভাবে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এই শ্রেণি মহাকষ্টে থাকলেও লোকলজ্জার ভয়ে না পারে কারও কাছে কিছু চাইতে, না পারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সহায়তা নিতে।
সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশালাকারে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তের প্রাপ্তি শূন্য। বাজেটে করোনায় স্থবির অর্থনীতি চাঙা করতে সরকার বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের জন্য করপোরেট কর ছাড়সহ নতুন নতুন শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ আছে। কিন্তু ব্যক্তি করদাতাদের আগের মতোই বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি আমলে নেওয়া দরকার। অথচ সবচেয়ে বেশি রিটার্ন জমা দেন মধ্যবিত্তরা। মধ্যবিত্ত এমন একটি শ্রেণি, যারা সবচেয়ে বেশি কর দেন; কিন্তু সুবিধা পান সবার চেয়ে কম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে তাদের সন্তানরা সুযোগ না পেলেও মধ্যবিত্তের ভরসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ বিদেশে পড়ানোর মতো অর্থ তাদের থাকে না। আবার বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভ্যাট আরোপ বহাল আছে।
মোবাইল গ্রাহকদের উপর ২০১৬ সাল থেকে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক বহাল আছে। সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩৩.২৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়। আর ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ২১.৭৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়। এ ছাড়াও কমিশনের রাজস্ব ভাগাভাগি, সিমট্যাক্স, করপোরেট ট্যাক্স মিলিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর আদায় করা হচ্ছে। বর্তমান করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি, অফিস-আদালত, আর্থিক লেনদেনসহ ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত কর্মকাণ্ড অনলাইনেই বেশি হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট এর ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, সিমট্যাক্স প্রত্যাহার, ও হ্যান্ডসেট ডিভাইসের মূল্য হাতের নাগালে রাখা, প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বল্পমূল্যে প্রাপ্তি দরকার। মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্ক ও সিমট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের করপেরেট কর বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি পারফিউম আমদানিতে সরকার ২০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিতে হচ্ছে।
মধ্যবিত্তের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মমাফিক অগ্রিম আয়কর পরিশোধ না করলে পরে দ্বিগুণ কর দিতে হচ্ছে। গাড়ির সুরক্ষা গ্যাসের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত রড, সিমেন্ট, সিরামিক বা টাইলস উৎপাদনে সরকার অনেক শুল্ককর ছাড় সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এ সুবিধার কারণে দাম কতটুকু কমবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অবশ্য দেশীয় শিল্পের স্বার্থে হোম এপ্লায়েন্স সামগ্রীর উৎপাদনে কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দেশীয় উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে। পাশাপাশি মধ্যবিত্তের অন্যতম বাহন কম সিসির মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বস্তির খবর দরকার।
আমরা প্রায়ই দেখি, বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হলেও বাজেট ঘোষণার পর দিন থেকেই বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ঢালাওভাবে নিত্যপণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপ বহাল থাকলে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা কমার আশঙ্কা এবং যে সমস্ত পণ্য দেশে উৎপাদিত হয় না এবং যে সব শিল্প উৎপাদনে দেশীয় দক্ষতা অর্জিত হয়নি, তাদের সুরক্ষা দিতে সম্পুরক শুল্প আরোপ ভোক্তা স্বার্থ পরিপন্থী। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার না করে তাদের জন্য বিশাল বরাদ্দ রাখা জনগণের করের টাকার অস্বচ্ছ ব্যবহার বলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সুশাসন যেরকম প্রতিষ্ঠা জরুরি, তেমনি ব্যাংকগুলোতে আমানতকারী ও ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।
করোনা পরবর্তীকালে সবার প্রত্যাশা বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন, পিসিআর ল্যাব স্থাপন, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, আইসিইউ স্থাপন ও করোনার ভ্যাকসিন খাতে বরাদ্দ বাড়নো দরকার। মন্ত্রী, সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও শিল্পপতিদের বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের কারণে দেশীয় হাসপাতালগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা। তারা একটু খানি জ্বর সর্দি হলেই চলে যান দেশের বাইরে। আবার যা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা কতটুকু সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে তার পরিষ্কার ছিত্র ফুটে উঠেছে আলোচিত জেকেজি, রিজেন্ট হাসপাতালকাণ্ড এবং করোনামহামারি শুরুর সময় পিপিই ও মাস্ক কাণ্ড দিয়ে। দেশীয় স্বাস্থ্য সেক্টরে কেনাকাটায় এধরনের লুটপাট, জবাবদিহিহীন স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট আরও প্রকট করে তুলেছে। তাই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছতা, সুশাসন, জবাবদিহিতা ও নাগরিক পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দিয়ে ডিজেলে ভুর্তকি প্রদান করা হলেও সার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কৃষি ও চাষযোগ্য আবাদি জমি হ্রাসের বিষয়টি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা থাকলে আগামীতে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। সার ও বীজ বিপণনে বিএডিসিকে সচল না করার কারনে দেশি-বিদেশি বহুজাতিক ব্যবসায়ীদের হাতে সার ও বীজ বিপণনের প্রক্রিয়াটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলে কৃষি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। প্রকৃত কৃষক ও উৎপাদনকারীর যথাযথ মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে সরকারের উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শস্য গুদাম ও হিমাগার স্থাপন করা, সরকারি উদ্যোগে কৃষি পণ্য ক্রয় এবং কৃষি পণ্য বিপণন খাতে সমবায় জোরদার করা দরকার, কৃষি ঋণ বিতরণে গুটি কয়েক ব্যাংক ও দুয়েকটি এনজিওকে দায়িত্ব না দিলে এর সংখ্যা বৃদ্ধি, এসএমই ঋণ, বর্গাচাষি ঋণ ও মহিলাদের জন্য এসএমই ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া আরও সহজতর করা ও আরও বেশি সংখ্যক ঋণদান সংস্থার উপর দায়িত্ব প্রদান ও এর পরিধি বাড়ানো দরকার।
করোনা মহামহারির কারণে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মহীন ও আয়-রোজগারহীন হয়ে পড়েছে, সেকারণে খাদ্য-পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি দরিদ্র ও প্রান্তিকজনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার। ওএমএস বাড়ানো দরকার। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে ১০ টাকার পেয়ার প্রাইস কার্ড মাঠ পর্যায়ে যথাযথ মনিটরিং দুর্বলতার কারণে এটি ব্যর্থ হলেও এটি চালু রাখা ও পরিধি বাড়ানো দরকার।
একই সঙ্গে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, শিশু খাদ্যসহ যেসমস্ত খাতে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করা হয়, তার সুফল যেন সাধারণ জনগণ পায় সে জন্য যথাযথ মনিটরিং করা এবং ব্যবসায়ী ও ভোক্তা স্বার্থ সংস্লিষ্ঠ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়াও জরুরিভাবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালীকরণ, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল, লজিস্টিক সুবিধা বৃদ্ধি, তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার শিক্ষা বিষয়ে কর্মসূচি পরিচালনায় বরাদ্দ বৃদ্দি, ব্যবসায়ী সংগঠনের পাশাপাশি ভোক্তা সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, খাদ্য ও পণ্য পরীক্ষায় বিএসটিআই এর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, টিসিবির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে একটি আপদকালীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে কার্যকর করা, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১কে আধুনিকায়ন ও কার্যকর করা, প্রতিযোগিতা কমিশণকে দ্রুত বিভাগীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ কার্যকর করা দরকার।
অধিকন্তু বাজেটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বিশেষ করে উৎসে কর কর্তন, সম্পূরক শুল্ক, মুসক, আবগারি শুল্ক এর পরিধি না বাড়ানো এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার। এনর্জি সেভিং বাল্ব, গ্যাস সিলিন্ডার খাতে কর হ্রাস করা, আয় করের সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল করে বাজেটকে ভোক্তাবান্ধব করা দরকার।
ব্যবসায়ীরা বাজেটের বহু পুর্বেই নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সেজন্য এ ধরনের মজুতদারদের কারসাজি বন্ধে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার আন্তরিক হবেন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য তদারকির কাজটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার দায়িত্ব হিসাবে বিবেচনায় নির্দেশনা প্রদান করা দরকার।
এ ছাড়াও নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখা সরকারের একটি অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার হলেও এ অঙ্গীকার পূরণে সরকারের রাজনৈতিক দৃশ্যমান উদ্যোগ প্রয়োজন। যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকেন, আর ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থ গৌণ হয়ে যায়। যার খেসারত দিতে হয ১৮ কোটি ভোক্তাকে। তাই দেশের সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে পৃথক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার করা হলে দেশীয় ভোক্তারা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। ভোক্তাদের মনোবেদনা ও ভোগান্তির বিষয়গুলো দ্রুত সরকারের নজরে আসা ও সমাধান অনেক বেশি সহজতর হবে। আশা করি সরকার ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।
লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
এসএ/এসএন