বাংলাদেশে প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য: কুষ্টিয়ার ঘৃণিত রাজাকার চত্বর
স্বাধীনতার পর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদের গৌরবময় স্মৃতি রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের নিমিত্তে এটিই বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য। ২০০০ সালের বিজয় দিবসে রাত ১২টা ০১ মিনিটে এই ভাস্কর্যটি প্রথম স্থাপিত হয় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সামনে। উদ্বোধন করেছিলেন ড. আবুল আহসান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহম্মেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজামান সেন্টু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি পিনু, কবি খৈয়াম বাসার, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সেক্রেটারি আমিরুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শাহীন সরকার, চিত্রশিল্পী মীর জাহিদ, আলোকচিত্রী মুক্তারুজ্জামান টিপু, কামরুজ্জামান, মোফাজ্জেল হোসেন প্রমুখ। পরবর্তীতে জাতীয়ভাবে ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য নির্মাণ কমিটির উদ্যোগে ভাস্কর শিল্পী ইতি খানের ডিজাইন ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই ভাস্কর্যটি শহরের প্রবেশ মুখে ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল মজমপুর গেট চত্বরে পুন:স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত।
ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকে তরুণ প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষরা ঘৃণিত ওই ভাস্কর্যটির গায়ে পাথর নিক্ষেপ করে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি প্রতীকী ঘৃণা প্রদর্শন শুরু করেন। ষ্টিলের পাত দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটি কংক্রিট ঢালাইয়ের একটি খুঁটির সাথে স্থাপন করা হয়, যার রক্তাভ জিহ্বা দেওয়া হয় ১৭ হাত! জিহ্বার মাথায় গজাল মেরে ভাস্কর শিল্পী ইতি খান বলেছিলেন: ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলা ও রাজাকারদের জঘন্য অপরাধের প্রতি আমৃত্যু ঘৃণা প্রদর্শনের জন্যই তিনি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।’ ভাস্কর্য ইতিহাসের কথা বলে। এরপর শুরু হয় কুষ্টিয়াতে বাঙালি চেতনাভিত্তিক কাজ করা। এই সকল কাজের সাথে জড়িত থাকার কারণে তাঁর বাসায় বোমা হামলাও হয়েছিলো। ১৯৭৫ এর পরবর্তী সময়ে মানুষ যখন স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস, বাংলা, বাঙালি, একরকম ভুলে যেতে বসেছেন। ঠিক সেরকম সময় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-বাঙলা-বাঙালি-স্বাধীনতা নিয়ে ইতি খান প্রচুর কাজ করেছেন কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। ভাস্কর্য শিল্পী রফিকুল ইসলাম ইতি খান কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সারাজীবন হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেছেন। আর পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে গঠিত ‘সুন্দর বাংলাদেশ’ নামে একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যমণি ছিলেন।
বিস্তারিত জানতে: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া
-----------------------------------------
লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন