বঙ্গবন্ধুর শিশু ভাবনা
বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালবাসতেন। সকল বয়সের, সকল শ্রেণির সকল মানুষকে বঙ্গবন্ধু ভালবাসতেন। এটি বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি দর্শন ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি শিশুদের কাছে টেনে নিতেন। শিশুদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করতেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় যে জন্মদিনগুলি পালন করেছেন, সেখানে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। আনুষ্ঠানিকভাবে কেক কাটা, মোমবাতি জ্বালানো এসব ছিল না। কিন্তু জন্মদিনটিতে বেশিরভাগ সময় শিশুদের সাথে কাটাতেন। তাদের সাথে কথা বলতেন, তাদের অনুপ্রাণিত করতে চেষ্টা করতেন। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে, দীঘ সময় যখন সামরিক সরকার এবং স্বৈরাচারী সরকার সেভাবে জন্মদিন পালন করেনি। কিন্তু পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সরকার এই দিবসটিকে যথাযথভাবে পালন করার পাশাপাশি শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
১৯৭১ এর ১৭ই মার্চ অগ্নিঝরা মার্চে বঙ্গবন্ধুর যে জন্মদিনটি ছিল, সেদিন ঢাকাসহ বহু দেশি বিদেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার ৫২তম জন্মদিনটি আপনি কিভাবে উদযাপন করছেন? তখন বঙ্গবন্ধু যে কথাটি বলেছিলেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, এই দুখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যদিনই বা কি? যখনই কারও ইচ্ছে হলো, আর আমাদের প্রাণ দিতে হয়।
অগ্নিঝরা মার্চে মানুষ হত্যা করছে পাকিস্তানিরা। একজন সাংবাদিক যখন জিজ্ঞাসা করলো, আপনার বাসায় কি আপনি কেক কাটেন নি? তখন বঙ্গবন্ধু বললেন যে, আমি জন্মদিনের কোন উৎসব পালন করি না। সাদামাটাভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে দোয়া করা হয়েছে। যার যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্রার্থনা করা, দোয়া করা ইত্যাদি করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন উৎসব করা হয়নি। তবে এটি ছিল যে, প্রতিবছর এই দিনে তিনি শিশুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে এ দিবসটিকে শিশুদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ দিবসে বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্নভাবে স্মরণ করার মধ্য দিয়েই দিনটি উদযাপন করা হয়।
এবছর জন্মবার্ষিকীতে যখন পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে, একদিকে করোনা, অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, ঠিক এই মুহূর্তে মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। তিনি সবসময় বলেছেন, সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ অবস্থান চাই। কোন ধরণের সংঘাতে আমরা জড়াতে চাই না। এবং বাংলাদেশের যে পররাষ্ট্রনীতি সেটি তিনিই নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। “বিদ্বেষ নয় বন্ধুত্ব।
সকলের সাথে বন্ধুত্ব। কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়। এবারের ২০২২ সালের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসটি পালন করতে গিয়ে আমরা সবাই মনে রাখবো, কিভাবে পৃথিবীকে শান্তির পৃথিবীতে রূপান্তর করা যায়। যেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের স্বপ্ন।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়