রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তনের অসীম ক্ষমতা নারীর হাতে
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ, সেটি ইতিবাচক একইসাথে কিঞ্চিৎ নেতিবাচক মনে হয়। এ সম্পর্কে আমার বিক্ষিপ্ত ভাবনার কয়েকটি দিক আলোচনা করছি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় সংসদে ১৪২টি আসন পায়। আওয়ামীলীগ পায় ৯২টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পায় ১৪৬টি এবং বিএনপি ১১৫টি। দুই নির্বাচনে কোনো দলই ১৫১টি আসন পায়নি।
সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা এ দুই নির্বাচনে কোনো দলেরই ছিল না। তারপরও এঁরা সরকার গঠন করেছে। এটি সম্ভব
হয়েছে ৩০টি নারী সংরক্ষিত আসনের জন্য। যেহেতু এই ৩০টি আসন সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যক্ষভোটে নির্বাচিত সদস্যদের ছাড়া নির্বাচিত, সেহেতু সর্বাধিক আসন যে দলটি পেয়েছে সে দলটি যাদের নারী আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে তারাই নারী আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। নারী আসনের সদস্যদের নিয়েই '৯১ সালে বিএনপি এবং '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়। তাহলে স্বীকার করতে হবে যে, এই নারী আসনের কারণেই সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদ ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে দুবারই ঝুলন্ত সংসদ ছিল। কেননা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কোনো রাজনৈতিক দলেরই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন (১৫১টি) ছিল না। তবু সরকার গঠিত হয়, ঝুলন্ত সংসদের সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ তার পূর্ণ মেয়াদকাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এদিক থেকে আমরা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে খানিকটুকু এগিয়ে আছি, কারণ ভারতে সরকার গঠনে অস্থিতিশীলতা বারবার দেখা দিয়েছে এবং বারবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, নারীদের নির্বাচন কি সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য? নাকি সংসদে নারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য? নাকি নারীমুক্তির জন্য? নাকি সমাজের রাজনৈতিক-সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে? সংবিধান প্রণেতারা নারী আসন সংরক্ষিত রাখার এই শুভ ফল কল্পনা করতে পেরেছিলেন কি-না কিংবা এই শুভ ফল অর্জনের জন্য নারী আসন সংরক্ষিত রাখার কথা ভেবেছিলেন কিনা, এই বিষয়ে যথাযথভাবেই একটি ধারণা পোষণ করা যায়।
সংবিধান প্রণেতারা সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষায়, নারী সংসদ সদস্যরা ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন কিনা, নারীরা সংসদ সদস্য হবেন। নারীরা সংসদ সদস্য হবেন এ কারণে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন এবং পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি জীবনদর্শন ভিন্ন। এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শনের যথাযথ প্রতিফলন রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাষ্ট্রীয় চিন্তায় ঘটাতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো নারী আসন সংরক্ষিত রাখা হলেই সংসদে কি নারীদের যথাযোগ্য, কার্যকর ও সম্মানজনক প্রতিনিধিত্ব ঘটবে? প্রথমত, যদি নারীদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখতে হয়, তাহলে তার জনসংখ্যার অনুপাতে রাখতে হবে। অন্যকথায়, সংসদের মোট আসনের প্রায় পঞ্চাশভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে, কেননা আগেই বলেছি নারীরা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় পঞ্চাশ ভাগ। কিন্তু সংসদের প্রায় পঞ্চাশ ভাগ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। দ্বিতীয়ত, নারীরা সমাজের একটি বিশেষ পশ্চাৎপদ অংশ। এ ধরনের বিশেষ পশ্চাৎপদ অংশ সমাজে আরো আছে। যদি নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হয় তাহলে অন্যসব বিশেষ পশ্চাৎপদ অংশের জন্যই বা রাখা হবে না কেন? যদি এটা করতে হয়, তাহলে হয় সংসদের বর্তমান আসন সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে, নয়তো সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত সর্বজনীন আসনের সংখ্যাহ্রাস করতে হবে। এর কোনোটাই বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। তৃতীয়ত, নারীরা পুরুষদের করুণার ওপর নির্ভর করে সংসদের আসন লাভ করবেন কেন? নারীরা নিজ যোগ্যতায় বহু ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এ প্রতিযোগিতা থাকা শুধু বাঞ্ছনীয় নয়, আবশ্যক। নারীদের নিজ যোগ্যতায় নিজেদের যথাযোগ্য মর্যাদা অর্জন করতে হবে। যদি এ প্রতিযোগিতা না থাকে, তাহলে নারীরা নিজেদের ক্ষমতার ওপর আস্থা নির্ভর হতে পারবে না। চতুর্থত,যদি নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকে,তাহলে নারীরা প্রধানত সংরক্ষিত আসন থেকেই সংসদ সদস্যপদ লাভ করবেন। সাধারণ আসন থেকেও কোনো কোনো নারী নির্বাচিত হতে পারেন, কিন্তু তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এটি আপাতত অলীক মনে হবে, কিন্তু নারীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে এ অসম্ভবও একদিন সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকলে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কেউ বলতে পারেন যে, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো ছাড়া অন্যসব আসন থেকে এখনতো নারী বিজয়ী হতে পারেন। এটি বাস্তবসম্মত নয়। কেননা সংরক্ষিত আসন নারীদের মেরুদণ্ডহীন করে দেয় এবং মেরুদণ্ডহীন অবস্থায় তাদের পক্ষে এই অতিকাজ্ক্ষিত অবস্থান অর্জন করা সম্ভব নয়। পরমুখাপেক্ষিতা থেকে নারীদের অবশ্যই সরে আসতে হবে। সুতরাং নারীদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষণ নয়, কিন্তু সংসদে নারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কীভাবে সেটি করা যাবে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার ।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে ৩০ জন নারী নির্বাচিত হন। জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটে যে ৩০০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তারা ভোট দিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ নির্বাচিত করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারী সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কোনো পার্থক্য থাকে না। সকল সংসদ সদস্যই একই অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং একই আইন ও নিয়মাবলী দ্বারা পরিচালিত হন। কিন্তু আসলে কি হয়? নারী আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না বলে কোনো ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় না। সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ সংরক্ষিত আসনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক আইনগতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। জাতীয় সংসদে যে রাজনৈতিক দল সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দান করে এবং যারাই এ মনোনয়ন লাভ করে, তারাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হন। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে এমনটিই ঘটেছে।
এ ব্যবস্থার তাৎপর্য কি? এক. সংরক্ষিত নারী আসনে যারা নির্বাচিত হন। তাদের নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের
উর্ধ্বে বিশেষ কিছু নয়। দুই. যেহেতু নারী আসনে প্রার্থীদের এভাবে নির্বাচিত করা হয়, তাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য জনগণের কাছে যেতে হয় না। ফলে তাদের সম্পর্ক ও যোগ ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে । তিন. তাদের জনগণের কাছে যেতে হয় না, সেহেতু তাদের বিশেষ পরিচিতি কিংবা কর্মময় রাজনৈতিক অতীত বা সুস্পষ্ট রাজনৈতিক চিন্তা থাকারও প্রয়োজন হয় না। তাদের প্রয়োজন হয় কেবল একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং সে দলের আস্থাভাজন হওয়া। দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দলের আস্থাভাজন হতে গেলে সে রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা থাকার প্রয়োজন হয় না। সে রাজনৈতিক দলের প্রধানের
আস্থাভাজন অথবা প্রিয়পাত্র হওয়াই মনোনয়ন লাভের জন্য যথেষ্ট ।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে নারী আসনে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য যদি জনগণের সঙ্গে একাত্মতাবোধ করার প্রয়োজনীয়তা না দেখেন কিংবা কোনো রাজনৈতিক আদর্শে গভীরভাবে বিশ্বাসী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা না দেখেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নারী আসনে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের আনুগত্য একজন ব্যক্তি বিশেষের প্রতি থাকাই তার সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা যায়। এর সবটুকুর পেছনেই সুবিধাবাদ লুকিয়ে আছে।
এই পরিস্থিতির অবসান ঘটা প্রয়োজন। নারীদের আরো অনেক বেশি সংখ্যায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সে অংশগ্রহণ নিষ্ক্রিয় না হয়ে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। নারীদের স্পষ্ট রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা থাকা প্রয়োজন। দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগ থাকা প্রয়োজন।
দেশের মানুষের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ তাদের জনসাধারণের আরো কাছাকাছি থেকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন
আনার যে অসীম সম্ভাবনা নারীদের হাতে আছে তা উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন। বলেছি নারীরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারেন। এখন তো প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেতা দুজনেই নারী। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে কি? না, আসেনি । রাজনীতি দ্বন্দ্বময় থেকে আরো ছন্দময় হয়ে উঠছে। যেসব মূল্যবোধ দ্বারা রাজনীতি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোর অনেকগুলো বিষয়েই গর্ববোধ করার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
তাহলে কি নারীরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারেন, এ কথাটি মিথ্যে? না, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নারী হলেও তাদের
ঘিরে আছে পুরুষরা । পুরুষদের পরামর্শ তাদের গ্রহণ করতে হয়, পুরুষদের আনুগত্য থেকে তারা যেন বঞ্চিত না হন, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় এবং রাজনীতিতে যে পুরুষের প্রাধান্য বেশি, সেদিকে লক্ষ রেখে রাজনৈতিক কৌশল ও রাষ্ট্র পরিচালনার পন্থা নির্ধারণ করতে হয়। অন্যকথায়-প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নারী হলেও তারা নারীদের যতটুকু প্রতিনিধি, তার চেয়ে বেশি প্রতিনিধি পুরুষদের ৷ তারা যে ইচ্ছে করে এমনটি হয়েছেন তা নয়, পরিস্থিতি তাদের এমন হতে বাধ্য করছে। সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব যদি উল্লেখযোগ্য হারে ঘটে এবং এসব নারী সদস্য যদি প্রকৃতপক্ষে এবং শতকরা একশভাগ জনগণের প্রতিনিধি হন, তাহলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসা অবশ্যম্ভাবী। এ পরিবর্তনটুকু আমাদের এখন খুবই প্রয়োজন। সেজন্যই সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব যথার্থ হওয়া প্রয়োজন ।
১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়, তাতে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংবিধান প্রবর্তনের সময় থেকে দশ বছরের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ১৯৯৭
সালে সামরিক আইনের এক আদেশ বলে এ সংখ্যা ৩০-এ উন্নীত করা এবং মহিলা আসন সংরক্ষিত থাকার মেয়াদ ৫ বছর বাড়িয়ে ১৫ বছর
হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় জাতীয় সংসদে নারীদের ৩০টি আসন সংরক্ষিত।
চতুর্থ জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য কোনো আসন সংরক্ষিত ছিল না। ১৯৯০ সালে যে সংসদ বিদ্যমান ছিল, সে সংসদের অব্যবহিত
সংসদ প্রথম যেদিন বসবে সে তারিখ থেকে ১০ বছর পার হওয়ার পর সংসদ থাকবে তা ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ৩০টি আসন নারী সদস্যদের
সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আগের মতোই প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন ।
ভারতে লোকসভায় নারীদের আসন সংরক্ষিত রাখার জন্য একটি বিল উত্থাপিত হয়েছিল। আমার যতদূর মনে পড়ে, সে বিলে প্রত্যেক রাজ্যে প্রতি ৩টি আসনের মধ্যে একটি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কোন আসনটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, তা নির্বাচন কমিশন স্থির করবে। প্রত্যেক নির্বাচনের সময় সংরক্ষিত আসনটি পরিবর্তিত হবে । তার মানে এক নির্বাচনে যদি, ধরা যাক, ১১ সংখ্যক আসনটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে, তাহলে পরের নির্বাচনে ১২ কিংবা ১৯ কিংবা ২১ সংখ্যক আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদ আশঙ্কা করতে থাকেন যে, তার যে আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সে আসনটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে এবং তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন। কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করেন যে, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনী এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির স্ত্রী কিংবা কন্যাই মনোনয়ন লাভ করবেন এবং নির্বাচিত হবেন। এ রকম পরিস্থিতিতে যে নারীদের সংসদ সদস্যপদ লাভ করা প্রয়োজন, সে উদ্দেশ্য সাধিত হয় না এবং নারী আসন সংরক্ষণ করা প্রহসনে পরিণত হবে। নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার চেয়ে সংরক্ষিত না রাখার যুক্তি বেশি। সেই যুক্তি আমরা আগেই পর্যালোচনা করেছি। আমি নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার পক্ষপাতী নই।
অন্যদিকে আমি চাই, সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ববিপুলভাবে বৃদ্ধি পাক। দুটি লক্ষ্য অর্জন করার একটি পথ সুধীজন বিবেচনা করে দেখতে পারেন। সংবিধান সংশোধন করে যদি এমন বিধান করা হয় যে, যেসব দল সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা প্রত্যেকে যতটি আসনে
দেবে, ততটি আসনের ন্যুনপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেক অবশ্যই নারী প্রার্থী দিতে হবে। সেক্ষেত্রে নারী প্রার্থীরা অন্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দিতা করে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। রাজনৈতিক অধিকার বাড়বে, তাদের রাজনৈতিক চেতনা শাণিত হবে।
তারা পুতুল হয়ে থাকবেন না, সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হবেন।
লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাহিত্যিক