জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসিকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনকে (বিইআরসি) ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক নাগরিক সভায় বক্তারা এ সব দাবি জানান।
সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
এম শামসুল আলম বলেন, যথাযথ আইনি সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ মতে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ তথা ভোক্তা সাধারণ। জনগণের অভিপ্রায়ের চরম অভিব্যক্তিরূপে দেশের সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন।
১৩ দফা দাবিগুলো হলো—
১. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হতে হবে।
২. সরকার ব্যক্তিখাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে।
৩. বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভুক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সব কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের সব আমালাদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানি/সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সে জন্য আপস্ট্রিম রেগুলেটর হিসেবে মন্ত্রণালয়কে শুধুমাত্র বিধি ও নীতি প্রণয়ন এবং আইন, বিধি-প্রবিধান অনুসরণ ও রেগুলেটরি আদেশসমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও লাইসেন্সিলের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। ডাউনস্ট্রিম রেগুলেটর বিইআরসিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
৫. মুনাফা ছাড়া কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারি মালিকানায় হতে হবে। কষ্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা দেবে।
৬. গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে।
৭. প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
৮. জলবায়ু তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি/আদায় নিশ্চিত হতে হবে। সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তদের সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে।
৯. বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
১০. জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল তহবিল (Energy Price Stabilized Fund) গঠন করতে হবে।
১১. ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী হওয়ায় (ক) দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ রদ করতে হবে এবং (খ) বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন-২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪(ক) বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
১২. ইতোমধ্যে বাপেক্স ও সান্তোষের মধ্যে মগনামা ২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি; বিইআরবি ও সামিট পাওয়ার লি. এর মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি এবং বিপিডিবি ও সামিট পাওয়ার লি. এর মধ্যে সম্পাদিত মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি বেআইনি, জনস্বার্থ বিরোধী ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী প্রতীয়মান হওয়ায় এ সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। অনুরূপ অভিযোগে অভিযুক্ত অনান্য চুক্তিসমূহও যাচাই-বাছাইক্রমে বাতিল হতে হবে ।
১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সব চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ আইনি প্রতিষ্ঠার অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে।
নাগরিক সভায় গ্যাস খাত সংস্কারের এ সব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বদরুল ইমাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান, ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্যাবের সদস্য অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, স্থপতি ইকবাল হাবিব, আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সংসদ সদস্য শামিম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ।
আরইউ/আরএ/