প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিন্দা

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত শিশুর নামে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে অসত্য সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কেন্দ্রীয় কমিটি।
শনিবার (১ এপ্রিল) বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে। আমরা এহেন অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত প্রথম আলোর বিতর্কিত প্রতিবেদনটি মহান স্বাধীনতাকে হেয় করার শামিল। এটি সাংবাদিকতার নামে এজেন্ডা বাস্তবায়নের ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ। বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ সাংবাদিকতা নয়, অপসাংবাদিকতা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, ‘উল্লেখিত প্রতিবেদনটিতে মূলত একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এবং দেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ প্রতীয়মান করতে অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এছাড়া, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যায়নি এবং এই মন্তব্য জনৈক দিনমজুর জাকির হোসেনের বলে পরবর্তীতে উল্লেখ করা হলেও ওই জাকির হোসেনকেও এখনো পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে। অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থী। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জাল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয় উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ওই বাসন্তীকান্ড যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাজানো হয়েছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে।
করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবেলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সংশ্লিষ্ট দোষী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন।
/এএস
