‘জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া ঠিক হবে না’

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নিয়ে যাবে। এই সিদ্ধান্ত সঠিক না বলে জানিয়েছেন সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা।
তারা জানান, সরকার যদি এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিনে নিয়ে যায় তাহলে ভোটার তালিকায় বড় গণ্ডগোল হবে। এটা নিয়ে বিরাট ঝামেলা হবে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে সাবেক সিইসি ও ইসিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও কে এম নুরুল হুদা।
এ ছাড়া সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক সচিবদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন--ড. মোহাম্মদ সাদিক, হেলালুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. মোখলেছুর রহমান, বেগম জেসমিন টুলী প্রমুখ।
এনআইডি সম্পর্কে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘ভোটার আইডি কার্ডের প্রজেক্ট থেকে এনআইডি আমার সময় নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট। ডাটাবেজটা সব জায়গায় থাকতে পারে, বিভিন্ন অফিসে থাকতে পারে, অসুবিধা নাই। কিন্তু মূলটা ইলেকশন কমিশনের হাতে থাকা উচিত।’
নির্বাচন কমিশন যেহেতু প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন তারাই পরিচালনা করবে। তারাই সব কিছু করেছে। তাদের এখানে না থাকলে...ভোটকেন্দ্র গিয়ে যদি আইডি কার্ড চান, আইডি কার্ডে দেখা গেল, নাম, বাবার নাম, আর একটা হয়েছে। আর ভোটার তালিকায় দেখা যাবে আর একটা হয়েছে। তখন আর একটা গোলমাল লাগবে। আইডি কার্ড যেটা নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার জন্য করা হয়েছিল মূলটা নির্বাচনের কমিশনের হাতে থাকা উচিত, যোগ করেন তিনি।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ বলেন, এনআইডিটা একটা সমন্বিত অংশ । ভোটার তালিকা থেকেই এসেছে। এখন ভোটার হতে চাইবে না লোকজন। ভোটার হওয়ার জন্য অতটা আগ্রহ নাই, কিন্তু এনআইডির জন্য এখন আগ্রহ বেশি। এই সুবিধাটা এখান থেকে সরানো উচিত না। এটা গণ্ডগোল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যবস্থার যদি কোনো দুর্বলতা থাকে সেটাকে সঠিক করতে হবে, ঠিক করতে হবে। এখানে নির্বাচন কমিশনে এটার বিরাট বড় ডাটাবেইজ আছে এবং সুরক্ষিত আছে। এটা ভালো সিস্টেম হয়ে আছে, সেই ভালো জিনিসটাকে আরও মজুবত করা উচিত।
আরেক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের তৈরি একটা জিনিসি। এটা নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকলে কোনো অসুবিধা হয় না সরকারের। সুতরাং এনআইডির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের বা ভোটার তালিকা পুরোপুরি সম্পর্ক আছে। এটা মাঝখান থেকে ধরে নিলে নির্বাচন কমিশনের কাজে অসুবিধে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এনআইডি সরকার কেন নিয়ে যাচ্ছে? কেন নিতে চাচ্ছে পরিষ্কার না। এটা আলাদা হলে কোনো এক সময় ভোটার তালিকা নিয়ে কথা উঠবে। তখন বলবে কারটা ঠিক? এনআইডি নাকি ভোটার তালিকা? এটা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, এনআইডিটা নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকা উচিত। ডাটাবেইজটা যে কেউ নিতে পারে। তাতে তো কোনো অসুবিধা নাই। এনআইডি অন্যখানে গেলে ভোটার তালিকায় অসুবিধা হবে। এটা নিয়ে পরে ঝামেলা হবে।
এসএম/এমএমএ/
