দুর্নীতি বন্ধে আইনের প্রয়োগ কঠোর হতে হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘দুর্নীতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয়। তবে আমাদের এখানে বেশি দৃশ্যমান। আমরা চেষ্টা করি দুর্নীতি কমিয়ে রাখতে। দারিদ্রতাও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। অনেক কাজে প্রকল্প পরিচালকের এখানে-সেখানে হয়তো কিছু এদিক-সেদিক হয়ে যায়। আমরা এখন যে বড় প্রকল্প নিয়েছি তা আমাদের পূর্বপুরুষরা চিন্তাও করেনি। আমাদের এই চাওয়া পূরণ হয়নি। ক্রয় ও কাজে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রয়োগে কঠিন হতেই হবে। কোনো খাতির করতে পারবে না।’
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে উন্নয়ন সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামান মামুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহানোয়র সাঈদ শাহীনের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে, আমন চলে আসবে। আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণও পাব। সবমিলিয়ে অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে। এটা সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে জিডিপি সাড়ে ৭ না হলেও সাড়ে ৬ শতাংশ দাঁড়াবে। এই মাসে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অক্টোবরে অনেক কমে আসবে মূল্যস্ফীতি। আশা করি মূল্যস্ফীতি কমবে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘গেল ১০ বছরে দেশে উন্নয়ন বেশি হওয়ায় খরচও হয়েছে বেশি। তবে আমলে নেওয়া হয়নি অনেক কিছু। করোনাভাইরাস ও বহির্বিশ্বে মোড়লদের কোন্দলের কারণে দেশের অর্থনীতি কিছুটা বিপাকে। তবে আগামী অক্টোবরের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
জ্বালানি তেলের মূল্য আগস্টে বাড়ানো হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় সবার কৃচ্ছ্রসাধন হওয়া দরকার। অর্থনীতির কাজই হচ্ছে মাপ-জোঁক করে করতে হবে। বিগত ১০ বছরে নতুন প্রাপ্তি ছিল বেশি। বৈশ্বিক কারণেই এই সংকট হয়েছে। খাদের শেষ প্রান্তে গিয়ে সরকারপ্রধান লাগাম ধরেছেন। এতে আমরা অনেক কিছু থেকে বেঁচে গেছি।’
আইএমএফের ঋণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের দায়-দায়িত্ব আমাদের জন্যও রয়েছে। কোনো সদস্য বিপদে পড়লে তারা ঋণ, উপদেশ, সহযোগিতা দিবে। কোনো রাষ্ট্র খাদে পড়ে গেলে সেখান থেকে তুলে আনার দায়িত্ব আইএমএফের। এখন আমাদের প্রয়োজন বেশি। সেক্ষেত্রে ঋণ চাইতে হবে। আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে মহাজনের মতো নয়। আইএমএফের ঋণ পেয়ে যাব। সামাজিক স্থিতিশীল নিশ্চিত করা না গেলে কেউ কাজ করতে পারবে না। দারিদ্রের হার ২০ শতাংশের আশপাশে রয়েছে হয়তো, তবে সঠিক বলা যাচ্ছে না।’
উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পের সমালোচনা আমাদের উপকারে আসে। তবে পরবর্তীতে সমালোচনা হলে সেটি সংস্কার করা সম্ভব হয় না। এসব সমালোচনা কাজের জন্য খুবই উপকারে আসে।’
প্রকল্পে কৃচ্ছতা সাধন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রকল্পের রিভিউ করতে হতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ একটি কাজের টাকা দিয়ে আরেকটি কাজ করতে হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গীয় সাংস্কৃতিতে গ্রাম ছিল প্রধান অথচ এটিকে সবসময় অবহেলা ও বাদ রাখা হয়েছিল। একমাত্র শেখ হাসিনাই গ্রামকে উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিয়েছেন। ৫০ বছর পর সব এক বাঙালি পরিবার হয়ে যাবে।’
ইকোনমিক জোনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইকোনমিক জোনগুলো বিশেষায়িত এলাকা। সেখানকার অবকাঠামো ঠিক করা আমাদের কাজ। তবে সেখানে জমি কিনে দেওয়া ও ব্যাংক ঋণ দেওয়া আমাদের কাজ নয়।’
জেডএ/এসজি