জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিলেন ব্যারিস্টার সুমন
জন্মদিনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙাতে ফুটবল খেলতে যান তিনি।
সেতুতে উঠে টোল প্লাজায় টোল দেওয়া সময় আসেন ফেসবুক লাইভে। বলেন, তার পদ্মা সেতু ভ্রমনের গল্প। এ সেতুর নির্মাণকে কেন্দ্র করে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এতো বড় ও সুন্দর একটি সেতু উপহার দেওয়ার জন্য।
নিন্দা জানান পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের ভূমিকায়। তিনি বলেন, যারা সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করেছেন তারা কিন্তু অনেকদিন ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু এতো সুন্দর একটি সেতু উপহার দিতে পারেননি।
গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ না থাকায় তিনি গাড়িতে বসেই তার অনুভূতির কথা জানান। তিনি বলেন, আমি আমার এলাকায় ৪১টি সেতু নির্মাণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন, তাকে ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য, জনস্বার্থে কাজ করতে গিয়ে ব্যারিস্টার সুমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুলের প্রসিকিউটরের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। কাজ করছেন হাজারো অসঙ্গতি নিয়ে। সিলেট সুমানগঞ্জের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে সুমনের মানবিক কাজগুলো অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি এ দুর্যোগকে কেন্দ্র করে নগদ অর্থ ও ৬০০ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন সবার সহযোগিতা নিয়ে।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা সদরের পাশে পীরবাজার নামক গ্রামে ১৯৭৯ সালের আজকের দিনে (৩ সেপ্টেম্বর) জন্মগ্রহণ করেন সহজ সরল সাদা মনের এই মানুষটি। তার বাবা ছিলেন সাধারণ একজন ব্যবসায়ী। মা গৃহিনী। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ছেলে সায়েদুল হক সুমন প্রথমে নিজের উপজেলায়, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে আইনজীবী পেশায় আছেন।
এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, বিভিন্ন দুর্নীতি-অসঙ্গতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ লাইভ প্রোগ্রামসহ ব্যতিক্রমী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
তিনি ময়লার ডাস্টবিন থেকে শুরু করে রাস্তার কাজের যে কোন অনিয়মে তিনি সবসময় বিরোধিতা করে গিয়েছেন এবং তিনি সব সময় রাস্তার যে কোনো অনিয়ম কাজ দেখলে সেটি সরাসরি লাইভে এসে তা সাধারণ মানুষকে জানিয়েছেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় ৬০ দিনের মধ্যে সড়কের বিপজ্জনক খুঁটি সরানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গরিব মানুষদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেন।
ব্যারিস্টার সুমন ঘোষণা দিয়েছিলেন এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য অন্তত ১০০টি সেতু তৈরি করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চান তিনি। এলাকার যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে ৪৩ বছর বয়সে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাশ্রমে তিনি ৩৯টি ব্রিজ ও ৫টি রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ব্যক্তিগত অর্থ ও শ্রমের দ্বারা সংস্কার করেছেন আরও ৪০টি রাস্তা। পাশাপাশি গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিনি উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেন এবং তাদের পাশে দাঁড়ান।
তিনি বিশ্বাস করেন, স্বপ্ন কখনো জাদু দ্বারা সত্যি হয় না। এটি সত্যি করতে দরকার সুদৃঢ় সংকল্প, আর ঘাম ঝরানো কঠোর পরিশ্রম। ইচ্ছা থাকলে এমপি-মন্ত্রী না হয়েও সব কাজ মানুষের কল্যাণে কাজ করা সম্ভব। কারণ মানুষই হচ্ছে কল্যাণের মুখ্য বিষয়।
সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় তহবিল সংগ্রহ করে দাঁড়িয়েছেন বন্যার্তদের পাশে। তার আহ্বানে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন দেশে ও দেশের বাহিরে থাকা বাংলাদেশীরা। নাম না জানা অগণিত মানুষের সেই ভালবাসা আর আমানত সর্বোচ্চ সততা আর নিষ্ঠার সাথে পৌঁছে দিয়েছেন বানভাসি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। চষে বেড়িয়েছেন বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল, নিজ হাতে বন্যা কবলিত মানুষকে খাবার পানীয় পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত দেননি, বরং বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেও কাজ করেছেন। এইতো কিছুদিন আগে সিলেটের ওসমানীনগর উপজলায় ব্যারিস্টার সুমনের উদ্যোগে নতুন ঘর পেলেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক বিধবা।
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন সুমন। সম্প্রতি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সরকারের উচ্চ মহলসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টায় ব্রত ছিলেন ফেববুক লাইভে। এছাড়াও তিনি গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা ডিজিটালাইজেশনের স্বার্থে শতাধিক মোবাইল ফোন প্রদান করেন।
মানবসেবায় ব্রত এই মানুষটি ক্রীড়া অনুরাগীও বটে। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে তিনি শিশুদেরকে ১ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ, ৫টি খেলার মাঠ মেরামত ও বঙ্গবন্ধুর নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। নিজের নামে গড়ে তুলেছেন ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমী। পেশাগত ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে সুযোগ তৈরি করে ভবিষ্যৎ ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা যোগাতে নিজেও দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে ফুটবল খেলে বেড়ান। নিজে যেমন স্বপ্নবাজ তেমনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দেশের অগণিত তরুণ ফুটবলারদের। নিজে যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি সে বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে চান যে- যদি অটুট লক্ষ্য, শ্রম আর সাধনাকে বিনি সুতোয় গাঁথা যায় তবে ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে একদিন ঠাই পাবে বাংলাদেশের নামও।
পেশায় আইনজীবী এই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন সমাজ বদলে দেয়ার। একাই এর জন্যে লড়ে যাচ্ছেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’র মত করে। এ লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্নসময় জনসচেতনামূলক ভিডিও এবং ফেসবুক লাইভ করে আসছেন সুমন।
এমএ/এএস