গুম ও হত্যার শিকার হওয়া শতাধিক পরিবারের দাবি
'সবাই এখন কথা বলতেও ভয় পায়'

গুম ও হত্যার শিকার হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যদের দাবি, সবাই এখন কথা বলতেও ভয় পায়। কাঁদতে কাঁদতে এখন আর কান্না আসে না। কেউ মত প্রকাশ করতে পারে না। ২০১৯ সালের জুনে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে ঈনশা ইসলাম শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গুম দিবসে তার বাবার সন্ধান চেয়ে গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন।
এসময় গুম ও হত্যার শিকার হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমাদের কথা শোনার মতো কেউ নেই। এদেশে এখন সবাই কথা বলতে ভয় পায়।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুম ও হত্যার শিকার হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যরা জড়ো হয়েছিলেন শাহবাগে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে আসেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়ালসহ অনেকেই।
সবার চোখেই তখন পানি। কেউ এসেছে বাবার খোঁজে, কেউ ভাইয়ের। কারও সন্তানের খোঁজ নেই বহু বছর।
কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে ঈনশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্যে বলে, নামাজে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য দোয়াও করতে পারি না। বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, তা-ও জানি না। বেহেশত নসীবের জন্য দোয়া করব, না ফিরে আসার জন্য আবেদন।
রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম চোখে পানি নিয়ে বলেন, এমন কোনো দপ্তর নেই যাইনি। ছেলের শোকে ওর বাবা মারা গেছে, নানি মারা গেছে। আমি মরে যাওয়ার আগে অন্তত একবার ছেলেটাকে দেখতে চাই।
কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া বলেন, আপনারা বুঝবেন না সাত বছর স্বামীর অপেক্ষা কী কষ্টের। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা। কার কাছে বিচার চাইব?’
এসময় বিএনপির নেতা তাবিথ আউয়াল সরকারের কাছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার যতই মুখ ঘুরিয়ে থাকুক। আমাদের চোখের পানি শুকোবে না, মনের ব্যথা কমবে না।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নুর খান তার বক্তব্যে গুমের ঘটনা তদন্তে একটা স্বাধীন ও শক্তিশালী কমিশন গঠনের দাবি জানান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘আয়নাঘর’ নামের বন্দিশালার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা এবং গুমের আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরের দাবিও তোলেন তিনি।
কেএম/এএস
