আত্মঘাতী বিআরটি প্রকল্প বন্ধ রাখার প্রস্তাব সেভ দ্য রোডের
উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে পাঁচ জনের নির্মম মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে সেভ দ্য রোড। সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে এ বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।
সেভ দ্য রোডের চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানা, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, আইয়ুব রানা, শওকত হোসেন, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী সংগঠনটির পক্ষে বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় মোট ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকার এই প্রকল্পটি শেষের মেয়াদ বলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ২০১৭ সালে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে উন্নীত করা হয় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়। এই নির্ধারিত সময়েও বিআরটির কাজ শেষ করা যায়নি। কারণ ঠিকাদারদের গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরির মতো দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম, অর্থ, প্রয়োজনীয় উপকরণ কিছুই নেই। এ কারণে মিল ছিল না তাদের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবেরও। সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৯১৭ দিনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কর্মপরিকল্পনা বদল করেছে ছয়বার। তাদের ৭ম সংশোধিত পরিকল্পনায় ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট কাজ শেষ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার মানে অতিরিক্ত ৭৭৩ দিন ধরা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদার জিয়াংসু প্রোভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের (জেডটিইজি) নাম উল্লেখ করে বলেছে, ঠিকাদারের বর্তমান কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড যথেষ্ট না হওয়ায় আই গার্ডার নির্মাণ তরান্বিত হচ্ছে না। তা ছাড়া প্রিকাস্ট বক্স গার্ডার নির্মাণের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিল দেরি করে। শুধু তা-ই নয়, পিয়ার হেড নির্মাণে ধীরগতির কারণে আই গার্ডারের ইরেকশনের কাজও ধীরগতি ছিল। ঠিকাদার বিভিন্ন সময়ে বক্স গার্ডার পরিবর্তনের প্রস্তাব দাখিল করায় হেড নির্মাণও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বক্স গার্ডারে পরিবর্তন এলে পিয়ার হেডের ডিজাইনে পরিবর্তন আসে। কর্তৃপক্ষের অংশের কাজ পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘স্মেক’লিখিতভাবে আরও জানিয়েছিল— ভূগর্ভস্থ এবং মাটির ওপরে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি লাইন থাকায় অনেক স্থানেই পাইল ক্যাপ রি-ডিজাইন করতে হচ্ছে। হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত আর কোন পাইল অবশিষ্ট না থাকায় টঙ্গী ব্রিজ থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত অবশিষ্ট ১৬০টির মতো পাইল নির্মাণ করতে হবে। এ প্রকল্পের সারিতে (রো) কিছু স্থাপনা এখনও অপসারণ না হওয়ায় অধিগ্রহণের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ মাসে ব্রিজ ডেক কাজ সম্পন্ন হবে। তবে এ জন্য কাজ করতে হবে তিনটি ভিন্ন ধরনের ১১ সেট যন্ত্রপাতি একাধারে রাস্তায় ৩৫০ মিটার এলাকায় রেখে। প্রকল্পের ১ নম্বর প্যাকেজের আওতায় ১৬ কিলোমিটার বিআরটি লেন ও ১৯টি স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনা গেঝুবা গ্রুপ কর্পোরেশন (সিজিজিসি)। গত জুনে প্যাকেজটির নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ এগিয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তার উপর ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গত ১০ বছর ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় জমেছে ইকুইপমেন্ট জঞ্জাল। এই জঞ্জাল অপরিকল্পিত-অব্যবস্থাপনার মধ্যে ১০ বছর সাধারণ মানুষকে যেমন কষ্ট দিয়েছে, তেমন কেড়ে নিয়েছে সময় এবং অর্থ।
এই প্রকল্পের কারণে প্রতিদিন উত্তরা-গাজীপুর-ময়মনসিংহ রোডে জ্যাম থাকত ১৩-১৪ ঘণ্টা। প্রতিদিন কেবলমাত্র জ্যামের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ২৬-৫০ কোটি টাকা। সেই ক্ষতির সাথে সাথে নতুন করে বাংলাদেশ ৫টি প্রাণও হারাল।
সম্প্রতি বিআরটি প্রকল্পের প্রধান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিআরটিসি বাস দিয়েই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’এমন বক্তব্য যেমন হাতশার হাওয়ায় ভাসাচ্ছে দেশকে, তখন সারাদেশে চলছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকট।
এই প্রকল্পের মত যত প্রকল্প রয়েছে, সব প্রকল্প বন্ধ করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন নেতারা। উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট গার্ডার পরে পাঁচ জনের মৃত্যুই প্রথম নয়, এর আগে গত ১৫ জুলাই মাত্র এক মাস আগে ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তারক্ষী জিয়াউর রহমান (৩০) নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আরও দুই জন।
আরএ/