জীবন এত সস্তা?

‘মৃত্যু’র চেয়ে সত্য কিছু নেই। জন্মিলে মরিতে হবে এই ধ্রুব সত্য মেনে নিয়েই মানুষ স্বপ্ন দেখে, পথ চলে। মানুষ বড় এবং বেড়ে ওঠার পাশাপাশি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীর জন্য কাজ করে অনবরত। বেঁচে থাকার অকুণ্ঠ ইচ্ছে পোষণ করলেও প্রতিটি মানুষ চায় তার মৃত্যু স্বাভাবিক ও সাবলীল হোক। প্রতিটি মানুষ চায় তার মৃত্যু যেনো দুর্ঘটনামুক্ত হয়। তারপরও কিছু মৃত্যু বিভৎস ও অনাকাঙ্ক্ষিত হয়। যে মৃত্যুগুলোর কাছে হেরে যায় জীবন। মরে যাওয়ার কারণগুলো জীবিত মানুষের অন্তরে দাগ এঁকে দেয়।
তখন জীবনটাকে ভীষণ তুচ্ছ ও সস্তা মনে হয়। মহা-মূল্যবান জীবনটাকে একেবারেই মূল্যহীন মনে হয়। এই মৃত্যুগুলোর দায় কেউ নেয় না, অথচ অনিয়মের কারণেই অকালে ঝরে যায় কত কত প্রাণ। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষে কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থার কথা শোনা গেলেও পরবর্তী সময়ে তা নিয়ে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করতে দেখা যায় না। এটাই বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট।
রাজধানীর উত্তরায় জসীম উদ্দীন এলাকার আড়ংয়ের সামনে সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকালে সাড়ে ৪টার দিকে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার ভেঙে পড়ে প্রাইভেট কারে থাকা শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই জন। বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলার সময় ক্রেন দিয়ে একটি গার্ডার ওপরে ওঠানো হচ্ছিল। ক্রেন উল্টে সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায় প্রাইভেট কারটি।
জানা গেছে, ঢাকায় একটি বউভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গাজীপুরের দিকে চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডারটি পড়ে। এই যে চোখের পলকে চারটি মানুষের মৃত্যু হলো এর দায় কে নেবে? চলতে চলতে প্রাণগুলো যে পিষে গেল গার্ডারে এজন্য কী সঠিক বিচার হবে, নাকি তদন্তনামক কাগজটি যুগের পর যুগ চাপা থাকবে অদৃশ্য কোনো অনিয়মের খাতায়। এমন ঘটনা এটিই প্রথম ঘটেছে এমনটি কিন্তু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে রয়েছে-ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর চৌধুরীবাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের লঞ্চিং গার্ডার গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় কাত হয়ে পড়ে জিয়াউর রহমান (৩০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়। এ সময় এক পথচারীও আহত হন। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন একটি সেতুর গার্ডার ধসে পড়ে লিয়াকত হোসেন (৩৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হন। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নির্মাণাধীন জাদুকাটা সেতুর একটি গার্ডার পিলার ঢলের পানিতে ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে একটি নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার ধসে একজন শ্রমিক নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়। গার্ডার ধসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায়। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে মর্মান্তিকভাবে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এসব দূর্ঘটনার সঠিক বিচার আজও হয়নি। দুর্ঘটনারোধে বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি আজ অবধি। এমন অনিয়ম ও বিচারহীনতা চলতে থাকলে এই মৃত্যুর মিছিলে আরও কত লম্বা হবে এটা কেউ বলতে পারে না।
এএম/এমএমএ/
