বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৫

ওয়াদি এল রায়ান থেকে তিউনিস ভিলেজের দূরত্ব ত্রিশ কিলোমিটার। হাতের ডাইনে দীর্ঘ কারুন হ্রদ এবং মাঝে মাঝে মরুদ্যান আর বাঁ দিকে বহুদূর বিস্তৃত মরুভূমি পেছনে ফেলে আমরা এগোতে থাকি। 

এক সময় মরুদ্যান ছাড়িয়ে আবারো কিছু দূর ধু ধু মরুপ্রান্তর পেরিয়ে যাবার পরে দেখা দেয় জনপদের চিহ্ন। দুপাশে একটি মরু মফস্বলের চেহারা স্পষ্ট হতে থাকে। একদিকে সুদৃশ্য মসজিদ এবং অন্যদিকে কয়েকটি দোকান বাঁয়ে রেখে আমরা প্রায় জনশূন্য একটা ছোট শহরের মতো এলাকায় ঢুকে পড়ি। পথের পাশে গাড়ি মেরামতের দোকান এবং রেস্তোরাঁর সাইন বোর্ড দেখে বুঝতে পারি এটিই তিউনিস গ্রাম। নামে গ্রাম হলেও এটি যে আসলেই মরুদ্যানের ছোট শহর তা বুঝতে বাকি থাকে না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসুনি যে রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়াল তার নাম নিউ তিউনিসিয়া রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ক্যাফে! এতোক্ষণ তো ভাবছিলাম গ্রামের নামে শহর! এখন দেখা গেল পুরো একটা দেশের নামই নিয়ে নিয়েছে এই গ্রাম! 

            তিউনিসের বন্ধ রেস্তোরাঁ

রেস্তোরাঁর বাইরে থেকে দরজা কপাট বন্ধ দেখেই সন্দেহ হয়েছিল, তারপরেও মোহামেদ সাদেক খোঁজ নিতে গাড়ি থেকে নেমে গেল। একটু পরে এসে জানাল দুবছর আগে করোনা মহামারির শুরুতে বন্ধ যাওয়া তিউনিসিয়া রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ক্যাফে আর চালু হয়নি। পরপর আরও গোটা দুই সরাইখানার বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে করাঘাত করেও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। 

ওমর খৈয়াম সম্ভবত এই রকম পরিস্থিতিতেই লিখেছিলেন ‘ভোরের পাখি শিস দিয়ে যেই উঠলো চারিধারে/পান্থশালার দ্বারে দাঁড়িয়ে ছিল যারা, বলল হেঁকে তারা/দুয়ার খোলো দুয়ার খোলো ভাই, সময় যে আর নাই।’ 
আমাদের এখানে ভোরের পাখি ডাক দেয়নি বরং দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও খাদ্যের অন্বেষণে পান্থশালা থেকে পান্থশালায় ঘুরে বেড়ালেও কেউ দরজা খোলেনি। 

         মৃৎ পাত্রের কারখানায়

তিউনিস কুমোরদের গ্রাম নামেই পরিচিত। কাজেই এখানে এসে মৃৎশিল্পের কর্মকাণ্ডের অন্তত একটি নমুনা না দেখে, শিল্পীদের নির্মাণ শৈলীর সাথে একটু পরিচিত না হয়ে ফিরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অতএব নেমে গেলাম সাদেকের নির্দেশনা অনুসারে। ভেতরে প্রবেশ করে বুঝলাম আমাদের কুমোর পাড়া, পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা যেমন মাটি ছেনে, চাক ঘুরিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে লাল টুকটুকে হাড়ি পাতিল কিংবা কালো কলস তৈরি করে তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি খুব বড় না হলেও মাঝারি আকারের সিরামিকের কারখানা। ভেতরে হাতে নকশা কেটে তৈজসপত্র তৈরির কাজ চলছে, এখানেও আগুনে পুড়ে নতুন রূপ লাবণ্যে ঝলসে উঠছে মাটির পাত্র! কিন্তু নির্মিত পেয়ালা-পিরিচ, থালা-বাসন যতোই ঝকঝক করুক বাইরের দিকে শো-রুমে দাঁড়িয়ে থাকা বিরস বদন বালিকাকে দেখে অনুমান করা যায় বেচা কেনা তেমন নেই।   

        আল মালাকের উদ্যানে     

তিউনিস গ্রামের পথে দু পাশের বর্ণহীন বাড়িগুলোর মধ্যে চোখে পড়ে দুই একটি সুদৃশ্য বাড়ি, কোনো কোনো বাড়ির দেয়াল থেকে ঝুলছে সবুজ লতাপাতাসহ ফুলের ঝাড়। মাঝে মাঝে দু চারটি সাজানো দোকান আর পথে দু চারজন বিদেশি পর্যটক। রংপুরের সতরঞ্চির মতো রঙিন সতরঞ্চি সাজিয়ে একটা দোকানে বসে আছে বিষন্ন কিশোর। সেই দোকানের সামনে দাঁড়াতেই একটু উৎসাহিত হয়েছিল ছেলেটি। কিন্তুতাকে হতাশ করেই আমরা এগোতে থাকি। শেষ পর্যন্ত বাসুনি বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে গাড়ি নিয়ে যেখানে সটান ঢুকে গেল তার চেহারা দেখেই বলে দেয়া যায় এটি একটি উচুঁ মানসম্পন্ন রিসোর্ট কাম রেস্টুরেন্ট। প্রবেশ পথে আল মালাক নামের হোটেলের সাইনবোর্ড পছন্দ হলো না। কিন্তুপাথরে বাঁধানো পথ দিয়ে হেঁটে দুপাশের সবুজ গাছপালা এবং সারি সারি রঙিন ফুলের ঝোপঝাড় পেরিয়ে যেখানে পৌঁছলাম মরুদ্যানে তেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ আশা করিনি।

       কাতরানি ক্যাম্প

চারিদিকে দীর্ঘ সবুজ গাছের বেস্টনি দেওয়া মাঠের একদিকে সুইমিং পুল এবং অন্যদিকে ছোট ছোট আবাসিক কুটির। এশিয়া ইওরোপের যে কোনো দেশের বিলাসবহুল হোটেলে সামনে পেছনে খোলা মাঠের চারিদিকে বাগানে ফুটে থাকা ফুলের সমারোহ দেখে অবাক হবার কিছু থাকে না। কিন্তুএখানে এই দিকচিহ্নহীন মরুপ্রান্তরের এক চিলতে মরুদ্যানে পুষ্প পাতার অভাবনীয় দৃশ্য কেবলই আমাদের বিস্মিত করে। ঘাসের সবুজ গালিচায় এক একটি টেবিল ঘিরে পেতে রাখা কয়েক সেট গার্ডেন চেয়ারের তিনটি দখল করে বসে পড়লাম। শুরু হলো মোহামেদ সাদেকের সাথে রেস্তোরাঁর পরিবেশকের কথপোকথন। আমি এরই মধ্যে মাঠের আর এক প্রান্তে চমৎকার প্রক্ষালন কক্ষ থেকে হাত মুখ ধুয়ে রীতিমতো তরতাজা হয়ে ফিরে এসেছি। মরুর দেশে তরু পল্লবে ঘেরা উদ্যানে বসে বিকেলের মৃদুমন্দ হাওয়া মন্দ লাগছিল না। কিন্তু সাদেকের কথা শুনে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! খাবারের মূল্যের কথা বাদ দিলাম, একদিন না হয় একটু বেহিসাবী হওয়া গেল, কিন্তু সময়ের মূল্য পরিশোধ করবে কে! খাবার তৈরি হয়ে টেবিলে পরিবেশনের জন্যে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় চেয়েছে আল মালাক! 

            তাঁবু রাত্রি যাপন

মালাকের কথা শুনে মোহামেদ সাদেক সিদ্ধান্ত দিয়ে দিল, ’এখান থেকে আধা ঘণ্টার দূরত্বে বেদুঈনদের একটা ক্যাম্প আছে কাতরানিতে। সেখানে ফোনে খবর দিয়ে খাবার তৈরি করতে বলে দিই, আমাদের পৌঁছাতে যে সময় লাগবে তার মধ্যে আশা করা যায় লাঞ্চ রেডি হয়ে যাবে।’ সাদেকের কথায় তথাস্তু বলে উঠে পড়লাম। মাঝখান থেকে তিউনিসের চমৎকার গ্রামে প্রায় অকল্পনীয় একটি রিসোর্টের অবিশ্বাস্য বাথরুম বিনামূল্যে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হলো! গাড়িতে উঠবার আগেই সাদেক তার নির্দেশনা দিয়ে নিশ্চিত হলো। বিকেল সাড়ে তিনটা বাজলেও ক্ষুৎ পিপাসায় কাতর হয়ে গেছি তা বলা যাবে না, তবে কাতরানি পৌঁছে খাবার না পেলে হয়তো সত্যিই কাতরানি শুরু হয়ে যাবে, তাই এই সতর্কতা। 

          কাতরানিতে ক্যাম্প ফায়ার

বিকেলের সূর্যের তেজ কমে যাবার সাথে সাথে বাসুনির তেজও কিছুটা কমে এসেছে মনে হলো। তাই চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথে না ছুটে সে পিচঢালা সোজা পথ ধরে প্রায় পঁচিশ মিনিট চলার পরে ডাইনে ঘুরে গেল। এখানে আবার সেই বালির মধ্যে দুপাশে পাথরের টুকরো বসানো পথের নিশানা। বালির উঁচু নিচু টিলা এবং ভাস্কর্য পেরিয়ে মিনিট পাঁচেক পরে যেখানে পৌঁছলাম সেটি যে আসলেই বেদুঈনের পান্থশালা তা কাউকে বলে দিতে হয় না। এখানে বাঁধানো সড়ক নেই, সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই, ইট পাথরের ঘর দরজা নেই। চারিদিকে বালির সমুদ্রের মধ্যে সারি সারি সাদা তাঁবু আর কাঠ বাঁশের তৈরি কিছু অস্থায়ী চালাঘর। বসার ব্যবস্থা  ফালি করে কাটা দীর্ঘ কাঠের বেঞ্চে। মরুভূমিতে নিশি যাপনের জন্যে তাঁবুতে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা তো আছেই।

          কাতরানির মরু কুটির

এ ছাড়াও ইচ্ছে করলে বালির পাহাড়ের গায়ে খোড়লের ভেতরে রাত কাটানো যায়। সম্ভবত ‘নাইট লাইফ’ উদযাপনের জন্যে বালির উঠানে মাঝখানে আগুন জ্বালাবার ব্যবস্থাসহ বৃত্তাকারে সতরঞ্চি পেতে আসর সাজানো আছে। উদর পূর্তির পাশাপাশি নৈশ্যভোজে উদর নৃত্যের ব্যবস্থা আছে কিনা তা অবশ্য তখনো জানতে পারিনি।   আমরা বালির আঙ্গিনা জুড়ে পেতে রাখার কাঠের লম্বা বেঞ্চে বসে পড়লাম। মোহামেদ সাদেক কিছুক্ষণ পরেই এসে জানালো খাবার তৈরি হচ্ছে। বুঝলাম ফোনে আধা ঘণ্টা বললেও আরো খানিকটার সময় দিতে হবে। অপেক্ষার সময়টা চারিদিকে ঘুরে ফিরে কাটানো যায়। বিরান বালুর মাঠেও দেখলাম পাশাপাশি গোটা দুই দোলনা ঝুলছে। একটাতে বোরকা পরা তরুণীকে দোল দিচ্ছে জুব্বাধারী এক তরুণ। চমৎকার দৃশ্যটি দেখে মনে হলো মিশরীয় ইসলামে তাহলে দোলনায় দোল খাওয়া হারাম নয়! কিছুদিন আগে এক হুজুরের ওয়াজে শুনেছিলাম ’দোলনা হচ্ছে শ্রী কৃষ্ণ ও রাধার লীলা খেলা, ইসলামে দোলনা দোলানোর কোনো জ্ঞান নাই!’ এরা বাংলাদেশি ইসলামে আরও কতো কিছু যে নিষিদ্ধ করবে আল্লাহই জানে। হেনাকে বললাম, ‘যাও কিছুক্ষণ দোলনায় দোল খেয়ে এসো।’ সে বললো, ‘দেখছো না ওখানে এখন হুজুরদের দোলে দোদুল ঝুলে ঝুলনা চলছে।’ বললাম, ‘একটা তো খালি আছে।’ হেনা বললো, ‘এখন আর দোল খেতে চাই না, খাবার খেতে চাই।’খাবার খেতে চাইলেই তো হয় না, এই পাণ্ডব বর্জিত ধু ধু বালুর চরে কে আমাদের জন্যে খাবার নিয়ে বসে আছে! আমরা দুজন চারিপাশটা ঘুরে দেখতে বেরোলাম।

        বালি পাহাড়ের কোটরে বিছানা-বালিশ

রানা ভাই যথারীতি এই বেদুঈন ক্যাম্পের সামান্য ইংরেজি জানা কর্মচারিকে পাকড়াও করে আলাপ শুরু করেছেন। তাঁবুগুলোকে পেছনে ফেলে ডান পাশে বালির টিলাগুলো রেখে সামনে এগিয়ে গেলেই ছড়িয়ে আছে দীর্ঘ জলাধার কারুন হ্রদ। কিন্তুশান্ত স্বচ্ছ এই হ্রদের আশেপাশে কোথাও কোনো সবুজ গাছ পালার ছিটে ফোঁটাও নেই। বিচিত্র ভাস্কর্যের মতো দেখতে লাইম স্টোনের পাহাড় কেটে কোথাও কোথাও সিঁড়ি চলে গেছে অনেক উপরে। আবার কোথায় নরম বালু মাটির সিঁড়িগুলোকে আটকে রাখার জন্যে ধাপে ধাপে বসিয়ে দেয়া হয়েছে খেজুর গাছের গুড়ি। এইসব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখালাম সতরঞ্চি এবং বিছানা বালিশ পাতা  একেকটি আবাসিক কক্ষ। লতাপাতা, বাঁশ কিংবা কাঠ খড় দিয়ে তৈরি ঘরগুলোকে নাম দেয়া যায় ‘মরু কুটির’ আর পাহাড়ের খোলের ঘরগুলো ‘গুহাগৃহ!’  আমরা ‘মরু কুটির’ ‘গুহাগৃহ’, মরু কুটিরের বহিরাবরণের আদলে তৈরি প্রাক্ষলণ কক্ষ এবং তাঁবু বাসের ব্যবস্থা সরে জমিনে দেখে এসে যখন টেবিলে বসলাম তখনও খাবারের খবর নেই। 

            বেদুঈনের তাঁবুতে বিলম্বিত লাঞ্চ

রানা ভাই এরই মধ্যে কাতরানি ক্যাম্পের কিছু তথ্য যোগাড় করে ফেলেছেন। আল ফাইয়ুম শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে লেক কারুনের তীর ঘেষে কয়েক একর জায়গা সরকারের কাছে থেকে লিজ নিয়ে এই তাঁবু বাসের আয়োজন। উচুঁ নিচু পাহাড়ের সারিতে সর্বোচ্চ গিরিশৃঙ্গের উচ্চতা সাড়ে তিনশ মিটার। মরুভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশে হাইকিং, ট্রেকিংয়ের জন্যেও অনেকেই, বিশেষ করে তরুণ ব্যাক-প্যাকাররা চলে আসে এখানে। এখানে পাহাড়ের মাথায় সোলার প্যানেল লাগিয়ে সীমিত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই, তবে টয়লেট বাথরুম যথেষ্ট আধুনিক এবং প্রবহমান পানির ব্যবস্থাও আছে। তাঁবু অথবা পাহাড়ের খোলে দুজনে রাত্রি যাপনের জন্যে গুণতে হবে ৩০ থেকে ৪০ মার্কিন ডলার। ট্যুরিস্ট সিজনে বিপুল সংখ্যক পর্যটক উন্মুক্ত বালিয়াড়িতে ক্যাম্প ফায়ারে মেতে ওঠে আর অনেকেই আসে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তারা ভরা আকাশ দেখতে। 

গল্পে আড্ডায় সময় কাটালেও আমাদের দৃষ্টি ছিল কখন কিচেন থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে! অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, হাত মুখ ধুয়ে আমাদের খাবারের খুপরিতে আসন নেওয়ার খবর এল। অবাক হয়ে দেখলাম মরুভূমিতে ভোজনের আয়োজন যেমনই হোক, বেসিনের উপরে ট্যাপ ঘুরিয়ে হাত ধোবার ব্যবস্থা আছে। বাড়তি হিসাবে বেসিনের উপরে আয়নায় নিজের চেহারাটাও একবার দেখে নেওয়া গেল। পাহাড়ের খোলে সতরঞ্চি পেতে মাঝখানে সামান্য উচ্চতার একটা টেবিল রেখে জাপানি কায়দায় পরিবেশিত হলো মিশরীয় খাবার। কে জানে মরু অঞ্চলের পরিবেশন রীতিও জাপানিদের মতো কিনা! পরিবেশন পদ্ধতি যাই হোক, খিচুড়ির মতো হলদে রঙের ভাত, গ্রিলড চিকেন, আধা সেদ্ধ আলুর তৈরি সবজি এবং টমেটো শশার সালাদের মধ্যে উঁকি দেওয়া ধনেপাতা দেখে মনে হলো বিলম্বিত লাঞ্চটা নেহায়েত মন্দ হবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই দর্শনধারী দ্বিপ্রাহরিক আহার দেখতে যেমনই হোক, খেতে ততোটা সুস্বাদু মনে হয়নি। তবুও বিরানভূমিতে আমাদের প্রাণ রক্ষার আয়োজনের জন্যে কাতরানি ক্যাম্প ধন্যবাদ পেতেই পারে। 

আমরা যখন লাঞ্চ শুরু করেছি, ঘড়িতে তখন পৌনে পাঁচটা বাজে। অর্থাৎ এরা দেড় ঘণ্টা না হলেও সময় নিয়েছে সোয়া ঘণ্টা। কায়রোর পথে এগিয়ে আসার আধা ঘণ্টা এই পনের মিনিটের সাথে যোগ করলে আমাদের লভ্যাংশে আছে পুরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট। তবে সবচেয়ে বড় লাভ কাতরানির এই বেদুঈন ক্যাম্প। তিউনিসের আল মালাকে লাঞ্চ করে কায়রো ফিরে গেলে মরু প্রকৃতির মাঝখানে এই অসামান্য সৌন্দর্যের আবাসভূমি অদেখাই থেকে যেত। লাঞ্চ শেষে আমরা যখন গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি তখন চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।  হঠাৎ করেই মাথার উপরে ঝরে পড়ল কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি। মোহামেদ সাদেক বলল, ‘এখানে প্রায় কখনোই বৃষ্টি হয় না। তোমরা নেহায়েত ভাগ্যবান!’ 

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৪    

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি: উপদেষ্টা আসিফ

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ হলরুমে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এসে এ কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, এত দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি। দেশের সংস্কার শেষে সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে।

তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান সরকার এসব এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সঙ্গে উপজেলায় একটি লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমরা আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সরকারি কর্মকর্তাদের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের ঠিকাদারিতে যুক্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সরকার কাজ করবে। এসব অনিয়ম রোধে আমরা পদক্ষেপ নেব।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা সরদার শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিজা বেগম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস, এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালাল পাকিস্তান, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালাল পাকিস্তান, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫। ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের আস্তানা লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই এবং আফগান সংবাদমাধ্যম খামা প্রেস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দফায় দফায় বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে আফগান সংবাদমাধ্যম খামা প্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার লামানসহ সাতটি গ্রামকে লক্ষ্য করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এসব বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। হামলায় একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হন।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, বিমান হামলায় বারমাল জেলার মুর্গ বাজার এলাকার একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া বিমান হামলার ফলে বেসামরিক মানুষ গুরুতরভাবে হতাহত হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, যা এই অঞ্চলে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হামলার পর উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

এদিকে পাকতিকার বারমালে বিমান হামলার পর তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আফগান এই মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের ভূখণ্ড এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের বৈধ অধিকার। একইসঙ্গে তারা এই হামলার নিন্দা করেছে।

অন্যদিকে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটির সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, সীমান্তের কাছে তালেবানদের আস্তানাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের এই হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের উপস্থিতি নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে জাহাজের ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়: র‍্যাব

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরে সারবহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত জনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ঘাতক আকাশ মন্ডল ইরফানের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে।

কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কোনো প্রকার বেতন ভাতা দিতেন না এমনকি তিনি দুর্ব্যবহারও করতো। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান সবাইকে হত্যা করেন।

তিনি জানান, ইরফান প্রথমে খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে সবাইকে অচেতন করে। পরে হাতে গ্লাভস পড়ে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সবাইকে কোপানের পর মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে জাহাজ চালিয়ে হাইম চর এলাকায় এসে অন্য একটি ট্রলারে করে পালিয়ে যান। মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সময় অন্যরা দেখে ফেলায় ইরফান তাদেরও হত্যা করে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

এর আগে গত সোমবার চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজ থেকে ৫ জনকে মৃত ও ৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পণ্যবাহী জাহাজটি গত রোববার সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার ঘাট থেকে যাত্রা করে। এরমধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরা জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। এতে সন্দেহ হয় মালিকপক্ষের। জাহাজের অবস্থান এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অন্য জাহাজ মুগনি-৩ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। ওই সময় মুগনি-৩ জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরা নামক জাহাজটিকে দেখতে পায়। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন। ফোন পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন। তারা যখন জাহাজটিতে উঠেছিলেন, তখন ইঞ্জিন বন্ধ ছিল।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি: উপদেষ্টা আসিফ
আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালাল পাকিস্তান, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে জাহাজের ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়: র‍্যাব
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় পাঁচজন আটক
ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসকের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীর হামলা
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
আবারও চিরকুটে ভাঙন, ব্যান্ড ছাড়লেন জাহিদ নিরব
আজ শুভ বড়দিন
আন্দোলনে নামলেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
যার যার ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
গণহত্যায় জড়িতদের বিএনপিতে নেওয়া হবেনা: মির্জা ফখরুল
কলকাতার কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন পিকে হালদারসহ ৬ সহযোগী
প্রেমিকাকে বিয়ে করছেন অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস
পদ্মা সেতু ও নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনরায় তদন্ত করবে দুদক
বড় পরিবর্তন আসছে আইইএলটিএস পরীক্ষায়, ২৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর
বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরল ভারতে পাচার হওয়া ২৬ বাংলাদেশি
আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে: শফিকুর রহমান
বাংলাদেশিদের জন্য চালু হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা
এস আলম গ্রুপের ৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের বিক্ষোভ