রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

‘টুইয়া’ ভ্রমণ তরীর রেস্টুরেন্ট একেবারে নিচের তলায়, বেশ বড় হল ঘর জুড়ে চারটি সারিতে টেবিল চেয়ার পাতা। একসাথে অন্তত দেড়শজনের লাঞ্চ বা ডিনারের ব্যবস্থা এখানে। দেড়টার দিকে রেস্তোরাঁয় ঢুকতে গেলে সুকুমার রায়ের চণ্ডীদাসের খুড়োর মতো কালো স্যুটপরা বেঁটে খাটো টেকো রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার কান পর্যন্ত হাসি বিস্তৃত করে রুম নাম্বার জানতে চাইলেন, তারপরে যে কোনো একটা টেবিল বেছে নিতে বললেন। তখন পর্যন্ত বেশিরভাগ টেবিলই খালি, কাজেই আমরা দেখে শুনে কোণের দিকের জানালার কাছে একটা জায়গা বেছে নিলাম।

প্রবেশ পথের উল্টো দিকের পুরোটা জুড়ে বুফে ডিশ সাজানো। ডান দিকে একেবারে শুরুতে পশ্চিমা ধরনের রুটির সমাবেশ এর সাথে বালাদি এবং মাহলাব নামের মিশরীয় রুটি। এরপর সেদ্ধ অথবা আধসেদ্ধ সবজি, টমেটো, গাজর, শশা, লেটুস পাতা, পেয়াঁজের সালাদ এবং সবজির বিভিন্ন আইটেম। এরপর মাছ, মাংস, ডিমের নানা পরিবেশনা। গ্রিল, ফ্রাই, গ্রেভি এবং লম্বা ঝোলে চুবানো হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল–একদিক থেকে নিশ্চিন্ত, এখানে কোনো নিষিদ্ধ মাংস নেই। নুডুলস, পাস্তা এবং মিশরীয ফালাফেল এবং কোশারি ছাড়াও নাম না জানা কিছু আইটেম আর সবশেষে মিষ্টান্ন। বিভিন্ন ধরনের কেক-পেস্ট্রি, পুডিং-পায়েশ ছাড়াও বুফেতে বিস্কট কুকিজ দেখে অবাক হই। উদর পূর্তি করে বুফে লাঞ্চের পরে কারা যে বিস্কুট চানাচুর খায়! হতে পারে কেউ কেউ এ সব দিয়েই লাঞ্চ বা ডিনার শুরু করে।

লাঞ্চে এত সব আয়োজন থাকলেও চা-কফি ছাড়া আর কোনো পানীয়ের ব্যবস্থা নেই। তবে নেই মানে একেবারে নেই বললে ভুল হবে। ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’ কথাটার উৎপত্তি কেন হয়েছিল জানি না, কিন্তু ‘ফেলো পাউন্ড খাও পানি’ এখানকার নিয়ম। অতএব ঊনচল্লিশ পাউন্ড দামের দেড় লিটার পানির বোতল নিয়ে টেবিলে বসেছিলাম।

এশিয়া ইওরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াবার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের জানা ছিল অনেক দেশেই রেস্তোরাঁয় বুফের সাথে খাবার পানি থাকে না। সেক্ষেত্রে চীনের শিয়ানে, সুইজারল্যান্ডের জুরিখে কিংবা বাড়ির কাছে শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে একই ব্যবস্থা। দলে ভারি থাকলে একসাথে গোটাকয় পাঁচ লিটারের বোতল কিনে ফেলেছি। এখানে জাহাজে থাকতে হবে তিনরাত, কাজেই আগেইভাগেই সতর্ক হয়ে রায়ান ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে দেড় লিটারের পাঁচটা বোতল নিয়ে ঘরে ফিরেছি। রায়ানে দেড় লিটার সাড়ে তিন পাউন্ড এবং এক লিটার আড়াই পাউন্ড মাত্র। অর্থাৎ ‘টুইয়া’ শুধ পানি বিক্রি করেই যাত্রীদের পকেট ‘ধুইয়া’ দেবার যে ব্যবস্থা করে রেখেছে তা থেকে আপাতত বাঁচা গেল।



দোকান থেকে দেড় লিটারের পাঁচটা বোতল হাতে জাহাজে ফেরাও ছিল একটা বিড়ম্বনা। মোহামেদ ‘ঐ যে ঘাট দেখা যায়’ বলে কেটে পড়লে ঘাটে যাবার সময় আমার পুরোনো ঢাকার সেই রসিকতার কথা মনে পড়লো। রিকশাওয়ালা ভাড়া একটু বেশি দাবী করায় যাত্রী বলেছিল ‘ঐ যে সদর ঘাট দেখা যায়। এত ভাড়া চাও কেন?’ তখন রিশাওয়ালার জবাব ছিল ‘আসমানের চাঁদ ভি দেখা যায়, গিয়া দ্যাখেন হালায়, কেমুন লাগে!’

আমাদের ঘাটও চোখে দেখা যাচ্ছিল, ঠিকই কিন্তু পানির বোতল ছাড়াও রানাভাই পপকর্ন, চিপস আরো কতো কীযে কিনেছিলেন সব কিছু নিয়ে হাঁটতে শুরু করার পরে বুঝলাম জাহাজের দূরত্ব চোখে দেখা দূরত্বের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি।

রাতে ডিনারের সময় দেখা দিল আরেক সমস্যা। চণ্ডীদাসের খুড়ো যথারীতি প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে বিনয়ে বিগলিত হয়ে বললেন, ‘স্যার বাইরে থেকে কোনো খাবার বা পানীয় কিছুই নেওয়া যাবে না।’

এদের এই ব্যবসায়ী চালাকিতে প্রথম রাতে খুব মেজাজ খারাপ করে কয়েক বাটি স্যুপ এবং পরদিন সকালে কয়েক গ্লাস ফলের রস খেয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু পরদিন দুপুর থেকে দেখা গেল অনেকইে পানির বোতল হাতে ঢুকে পড়েছেন। বোঝা গেল চণ্ডীদাসের খুড়ো শেষপর্যন্ত যাত্রীদের সম্মিলিত আক্রমণ ঠেকাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

আমার ধারণা ছিল, সন্ধ্যায় আমাদের ভ্রমণতরী নোঙর তুলে উত্তরে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল আগামীকাল দুপুরের আগে আসোয়ান ছাড়ছে না টুইয়া। এখান থেকেই অতি ভোরে আমরা বেরিয়ে পড়বো আবু সিম্বেলের উদ্দেশ্যে। ভোর চারটায় রিসেপশান থেকে ওয়েক-আপ কল দেয়ার আগেই উঠে পড়েছি। বাড়তি সতর্কতা হিসাবে মোবাইল ফোনে এ্যালার্ম দেওয়া ছিল, কিন্তু ঘুম ভেঙেছে তারও আগে। তৈরি হয়ে বেরোতে বেশি দেরি হয়নি। এত সকালে ভ্রমণ ব্যবস্থাপক ইয়াসিরের সাথে দেখা হবে ভাবিনি। আমরা তিনজন যেহেতু ব্রেকফাস্টের সময় জাহাজে থাকতে পারবো না সেই কারণে সৌরভ বলে দিয়েছিল টেক্অ্যাওয়ে ব্রেকফাস্টের কথা যেন আগের রাতেই বলে রাখি। আমরা ভুলে গেলও ইয়াসির নিজে উপস্থিত থেকে চারজনের নাস্তার প্যাকেটসহ গাইড ওসামার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে দিয়েছে। আমি বোধহয় নিজের অজান্তেই উচ্চারণ করে বলে ফেলেছিলাম, ‘ওসামা বিন লাদেন!’ ওসামা নিজেকে বাঁচাতে দ্রুত বলে উঠলেন, ‘আমি একজন নিরিহ স্কুল মাস্টার।’ ওসামার বিস্তৃত পরিচয় নেবার আগেই মাইক্রোবাসে উঠে পড়তে হলো। টুইয়া থেকে নেমে ঘাটে অন্তত গোটা তিনেক মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। প্রথমটাতে আমাদের জাহাজের কয়েকজন যাত্রী দেখে আমি সেটাতে প্রায় উঠে পড়েছিলাম। ইয়াসির জানালো আমাদের গাড়ি পেছনে এবং যাত্রী আমরা তিনজন।

এই প্রথম জানতে পারলাম ‘টুইয়া’ জাহাজের সাথে আমাদের ফিলাই কিংবা আবু সিম্বেল ভ্রমণের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে দাঁড়ানো গোটা চার পাঁচেক বাহন তাদের নিজস্ব টুরিস্টদের নিয়ে ভোরে যাত্রা করে বেলা দেড়টার মধ্যে আবার জাহাজে তুলে দেবে, তারপরেই জাহাজ নোঙর তুলে যাত্রা করবে লাক্সরের পথে। মাত্র গোটা কুড়ি প্রকৃত পর্যটক যখন ভোরের সুখনিদ্রার সময় শয্যা ত্যাগ করে আবু সিম্বেলে দ্বিতীয় রামেসেস এবং নেফারতিতির মূর্তি দেখতে যাচ্ছে, তখন জাহাজ শুদ্ধো শ’তিনেক মানুষ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

চালকের আসনে বসে আয়মান যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আসোয়ান শহর থেকে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাত না পোহাতেই রাস্তায় ‘উন্নয়ন কাজ’ শুরু হয়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝেই একদিকের চলাচল বন্ধ রেখে শুধু অন্যদিকের গাড়িগুলো চলছিল। শহর পেরোবার আগেই বেশ কয়েকটা পথের মোড়ে, চৌরাস্তায় কিংবা কোনো চত্বরে আলোকোজ্জ্বল পাথরের ভাস্কর্য চোখে পড়ে। খুব শৈল্পিক বা কুশলী কোনো নির্মাণ নয়, পাথর কেটে বা খোদাই করে এক ধরনের অবয়ব বা কাঠামো নির্মাণ! ওসামা জানালেন, এখানে বিভিন্ন ধরনের পাথরের সহজলভ্যতার জন্য সারা দেশ থেকে ভাস্কর্যের শিক্ষার্থীসহ শিল্পীরা আসোয়ানে এসে পাথর খোদাই শিল্পের শিক্ষালাভ করে। সেইসব শিক্ষানবীশ শিল্পীদের কিছু কাজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। পথে ওসামা ডাইনে বাঁয়ের দুই একটা দ্রষ্টব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ধারা বিবরণী দিচ্ছিলেন, ‘হাতের বামে ওই যে দূরে ফিলাই টেম্পলে বাতি জ্বলছে।’ একটা বেশ চওড়া খালের উপর দিয়ে পার হচ্ছি, জানলাম লেক নাসের থেকে এই লেকের উৎপত্তি, মিলেছে নীল নদে।

আসোয়ান থেকে আবু সিম্বেলের দূরত্ব ২৯০ কিলোমিটার। শহর ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পরে মরুভূমির শেষ প্রান্তে আকাশ লাল হতে আরম্ভ করলো, তারপরেই একটু একটু করে উঁকি দিয়ে চোখ মেলে দেখা দিলো ভোরের প্রথম সূর্য। সোয়া পাঁচটার দিকে সূর্যোদয় দেখতে দেখতেই আমরা আরো কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে গেলে সকালের রোদে ঝলমল করে উঠলো পূবের মরুপ্রান্তর। কিছুক্ষণ পরে আয়মার গাড়ির গতি কমাতে শুরু করলে হাতের ডাইনে পথে পাশে চোখে পড়লো বিভিন্ন দিকে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে পাঁচ ছয়টি মন্দিরের নাম লেখা দিক নির্দেশক ফলক। এই ধু ধু মরুভূমির আশেপাশেই যদি একাধিক মন্দিরের অস্তিত্ব থাকে, সাড়ে তিন হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ যদি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে ফারাওদের রাজত্বে এই অঞ্চলে আরো কতো যে মন্দির, কতো উপাসনালয়, কতো প্রাসাদ গড়ে উঠেছিল তার হিসাব হয়তো আর কখনোই পাওয়া যাবে না।

ইউনেস্কো ঐতিহ্যের অংশ আবু সিম্বেলের মন্দির দুটির বিশেষত্ব হলো–দুটি স্থাপনার কোনোটিই পাথর, কাদামাটি, সিমেন্ট বা অন্য কোনো পদার্থ দিয়ে গড়ে পিটে তৈরি নয়, বরং পাহাড়ের বিশাল পাথরের শরীর কেটে কুঁদে নির্মাণ করা হয়েছে। আসোয়ানের বিপুলায়তন বাঁধ নির্মাণের সময় তিন হাজার দুশ বছর আগের মন্দির দুটি সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হতে চলেছিল। মিশর সরকার মন্দির দুটি রক্ষার জন্যে ইউনেস্কোর কাছে আবেদন জানায়। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ১৯৬০ সালে। প্রধানত একটি সুইডিশ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ববধানে বিশ্বের অনেকগুলো দেশের অভিজ্ঞ পরামর্শক, স্থপতি এবং প্রকৌশলী মন্দির দুটি স্থানান্তরের কাজ শুরু করে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিন হাজার মানুষ দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সফল ভাবে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তর করেছে রামসেস নেফারতিতিকে।

আবু সিম্বেল টেম্পল স্থানান্তরের সময় প্রথমেই এর ছাদসহ পাহাড়ের উপরের অংশ সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর ছাদ, দেয়াল, পিলার এবং মূল মূর্তিগুলো ছোট ছোট ব্লকের আকারে কেটে ফেলা হয়েছে। তবে পাথরের এ সব ছোট ব্লকের এক একটির ওজনও তিন টন থেকে ত্রিশ টন পর্যন্ত। পাথর কাটার জন্যে কোনো বিস্ফোরক বা ভারি হ্যামার ব্যবহার করা হয়নি। বৈদ্যুতিক করাত এবং অনেক ক্ষেত্রে ড্রিল মেশিন ও হ্যান্ড স’ব্যবহার করে সতর্কতার সাথে বিশাল এক একটি ব্লক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন জায়গায় বসাবার সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটারের বেশি এদিক সেদিক হয়নি। ওসামা যখন বলছিলেন আবু সিম্বেল স্থানান্তরের কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, তখন ভাবছিলাম আফগানিস্তানে মোল্লা ওমর তার রাজত্বকালে কতো কম খরচে বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আফগান জাতীয় জাদুঘরের সকল প্রাক-ইসলামিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করে তালেবানরা ইসলামের ঝাণ্ডা উড়িয়ে দিয়েছে।

চালকের আসনের পাশেই বসেছিলেন রানা ভাই এবং ওসামা বসেছিলেন ঠিক আমাদের আসনের সামনে। মাঝে একবার পথে গাড়ি থামিয়ে আরো একজনকে তুলে নিয়ে ওসামা বললেন ওর নাম সাঈদ, আমাদের বদলি ড্রাইভার। অর্থাৎ পর্যটক তিনজন এবং গাইড ও চালক মিলিয়ে তিনজন। এ ভাবে এখন কেমন চলছে মিশরের পর্যটন শিল্প? ওসামাকে জিজ্ঞেস করতেই উত্তর পেলাম, ‘আসলে কোভিড আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। পর্যটন, শিক্ষা, শিল্প-বাণিজ্য কিছুই বাদ নেই।’

চমৎকার ইংরেজি বলেন ওসামা। রানা ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে জানা গেল ভয়ংকর ওসামা নামের আড়ালে আমাদের ওসামা স্কুলের অংকের শিক্ষক, কোভিডে চাকরি হারিয়ে এখন টুর গাইডের কাজ নিয়েছেন। তবে এখনো টুরিস্টের সংখ্যা কম, শুধু গাইডের কাজ করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের গাড়ির গতি কমতে কমতে এক সময় ডান দিকে নেমে গেল। প্রান্তরের ভেতরে অস্থায়ী সরাইখানায় যাত্রা বিরতি। অনেকগুলো টুরিস্ট বাস আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। ছোট বড় আরো কিছু বাহনের ফাঁকে দেখা গেল বড় একটা বাসের গায়ে লেখা আওয়ামি ট্রাভেলস। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মালয়েশিয়া বা কানাডায় ব্যবসা বাণিজ্য করলেও আমাদের কোনো দেশিভাই মিশরে এসে ট্রাভেল এ্যান্ড টুরিজম ব্যবসা শুরু করেননি। অতএব আওয়ামি বাসকে পাশ কাটিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকে গেলাম। ভেতরে বসার জন্যে জায়গা যথেষ্ট খালি থাকলেও প্রক্ষালণ কক্ষের সামনে লাইন বেশ দীর্ঘ। নারী পুরুষের দুটি ভিন্ন কক্ষের দরজার কাছে টোল আদায়কারীর মতো বসে থাকা দ্বাররক্ষকের কাছে পাঁচ পাউন্ড পরিশোধ করে ঢুকতে হবে। আমি প্রথম সুযোগে ভেতরে ঢুকে গেলে রানা ভাই একটা গদি আঁটা চেয়ারে বসে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালেন।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা